কোয়েল পাখির খাবার ও পালন পদ্ধতি: ভ্যাকসিন সহ সম্পূর্ণ গাইড
কোয়েল পাখি পালন নিয়ে ভাবছেন? জানুন কোয়েল পাখির খাবার তৈরি পদ্ধতি, দিনে কতটুকু খাবার প্রয়োজন, খাচায় পালন পদ্ধতি, ভ্যাকসিন ও ঔষধ তালিকা..
কোয়েল পাখি (Quail), কোয়েল পাখির জন্য সাধারণত বিভিন্ন ধরনের খাবার যেমন: শস্য, বীজ, পোকামাকড় ও সবুজ পাতা খেয়ে থাকে। তবে খামারে পালনের ক্ষেত্রে তাদের জন্য বিশেষ খাদ্য প্রস্তুত করা হয়।
Don't Click here
কোয়েল পাখির খাবারের তালিকা:
১. প্রাকৃতিক খাদ্য:
- শস্য ও বীজ: গম, ধান, ভুট্টা, কাউন, বাজরা
- পোকামাকড়: ছোট কীটপতঙ্গ, উইপোকা, কেঁচো
- সবুজ খাবার: লেটুস, পালং শাক, ঘাস
- ফলমূল: পাকা পেঁপে, কলা, টমেটো
২. খামারের তৈরি খাদ্য:
- প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য: সয়াবিন মিল, মাছের গুঁড়া, সরিষার খোল
- শক্তি সরবরাহকারী খাদ্য: ভুট্টা, গম, চালের কুঁড়া
- ভিটামিন ও খনিজ: ক্যালসিয়াম, ভিটামিন প্রিমিক্স, ডি-ক্যালসিয়াম ফসফেট
৩. কোয়েল পাখির বয়সভিত্তিক খাবার:
- বাচ্চা কোয়েল (০-২ সপ্তাহ): ২৭-২৮% প্রোটিনযুক্ত স্টার্টার ফিড
- কিশোর কোয়েল (৩-৬ সপ্তাহ): ২০-২২% প্রোটিনযুক্ত গ্রোয়ার ফিড
- বয়স্ক ডিমপাড়া কোয়েল: ১৮-২০% প্রোটিনযুক্ত লেয়ার ফিড
খামারে কোয়েল পালন করলে বাজার থেকে বিশেষ প্রস্তুত করা কোয়েল ফিড ব্যবহার করাই ভালো। এতে পুষ্টির সঠিক সমন্বয় থাকে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ে।
আরো পড়ুন … নারিশ সোনালী ফিড দাম : ব্রয়লার মুরগির খাবারের দাম ২০২৫

কোয়েল পাখির খাবার তৈরি
কোয়েল পাখির জন্য সুষম খাদ্য তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদের দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং ডিম উৎপাদন বাড়ায়। আপনি ঘরে বসেই উপযুক্ত উপাদান দিয়ে কোয়েল পাখির খাবার তৈরি করতে পারেন।
কোয়েল পাখির জন্য ঘরে তৈরি ফিড রেসিপি
১. বাচ্চা কোয়েল (০-২ সপ্তাহ) ফিড রেসিপি
প্রয়োজনীয় উপাদান: (প্রোটিন: ২৭-২৮%)
- ভুট্টার গুঁড়া – ৪০%
- চালের কুঁড়া – ১০%
- সয়াবিন মিল – ২৫%
- মাছের গুঁড়া – ১৫%
- ডি-ক্যালসিয়াম ফসফেট – ২%
- ক্যালসিয়াম (চুন বা খোড়া খোলস) – ৫%
- ভিটামিন প্রিমিক্স ও লবণ – ৩%
২. কিশোর কোয়েল (৩-৬ সপ্তাহ) ফিড রেসিপি
প্রয়োজনীয় উপাদান: (প্রোটিন: ২০-২২%)
- ভুট্টার গুঁড়া – ৫০%
- চালের কুঁড়া – ১৫%
- সয়াবিন মিল – ১৮%
- মাছের গুঁড়া – ১০%
- ডি-ক্যালসিয়াম ফসফেট – ২%
- ক্যালসিয়াম (চুন বা খোড়া খোলস) – ৩%
- ভিটামিন প্রিমিক্স ও লবণ – ২%
৩. ডিমপাড়া কোয়েল (বয়স্ক) ফিড রেসিপি
প্রয়োজনীয় উপাদান: (প্রোটিন: ১৮-২০%)
- ভুট্টার গুঁড়া – ৫৫%
- চালের কুঁড়া – ১৫%
- সয়াবিন মিল – ১৫%
- মাছের গুঁড়া – ৭%
- ডি-ক্যালসিয়াম ফসফেট – ২%
- ক্যালসিয়াম (চুন বা খোড়া খোলস) – ৪%
- ভিটামিন প্রিমিক্স ও লবণ – ২%
ফিড তৈরির নিয়ম:
১. সব উপাদান ভালোভাবে গুঁড়া করে মিশিয়ে নিন।
2. শুকনো অবস্থায় সংরক্ষণ করুন এবং দিনে ২-৩ বার খাওয়ান।
3. পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন, যেন পাখিগুলো সহজেই খেতে পারে।
4. প্রয়োজনে পুষ্টির ভারসাম্য ঠিক রাখতে বাজারের প্রিমিক্স ব্যবহার করতে পারেন।
অতিরিক্ত টিপস:
- খনিজের অভাব পূরণ করতে মাঝে মাঝে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিমের খোসা গুঁড়া বা ঝিনুকের গুঁড়া মিশিয়ে দিতে পারেন।
- কোয়েলের খাদ্যে অতিরিক্ত লবণ বা তেলযুক্ত খাবার দেবেন না।
- সবসময় পরিষ্কার ও টাটকা খাদ্য ব্যবহার করুন।
এভাবে বাড়িতেই কম খরচে স্বাস্থ্যকর কোয়েল ফিড তৈরি করতে পারবেন!
আরো পড়ুন …. দেশি মুরগির দাম ২০২৫: দেশী মুরগির খাবারের দাম ও পালন পদ্ধতি
কোয়েল পাখি দিনে কতটুকু খাবার খায়
কোয়েল পাখির বয়স ও উৎপাদন পর্যায়ের ওপর নির্ভর করে তাদের খাবারের চাহিদা পরিবর্তিত হয়। সাধারণত, একেকটি কোয়েল পাখি দিনে ২০-৩০ গ্রাম খাবার খেয়ে থাকে।
বয়সভিত্তিক খাবারের পরিমাণ:
- বাচ্চা কোয়েল (০-২ সপ্তাহ): প্রতিদিন ৫-১০ গ্রাম
- কিশোর কোয়েল (৩-৬ সপ্তাহ): প্রতিদিন ১২-২০ গ্রাম
- ডিমপাড়া কোয়েল (বয়স্ক, ৬ সপ্তাহের বেশি): প্রতিদিন ২৫-৩০ গ্রাম
অতিরিক্ত টিপস:
- ডিমপাড়া কোয়েল পাখির খাদ্য গ্রহণ বেশি হয়, কারণ তাদের শরীরে ডিম উৎপাদনের জন্য বেশি পুষ্টি প্রয়োজন।
- কোয়েলের খাবার সবসময় নির্দিষ্ট পরিমাণে ও নিয়মিত সময় অনুযায়ী দেওয়া উচিত।
- পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে, কারণ পানির অভাবে খাবার গ্রহণ কমে যেতে পারে।
আপনার কোয়েল পাখির উৎপাদন বাড়াতে সঠিক মাত্রায় পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ!
আরো পড়ুন …. ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম ২০২৫: বর্তমান বাজার বিশ্লেষণ

খাচায় কোয়েল পাখি পালন পদ্ধতি
খাঁচায় কোয়েল পাখি পালন করা বেশ জনপ্রিয় এবং কার্যকর পদ্ধতি, কারণ এতে কম জায়গায় বেশি পাখি পালন করা যায়, রোগের ঝুঁকি কম থাকে, এবং পরিচর্যা করা সহজ হয়।
১. খাঁচার ধরন ও আকার
খাঁচার নকশা কোয়েল পাখির স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে, তাই এটি যথাযথভাবে তৈরি করা জরুরি।
✅ খাঁচার আদর্শ মাপ:
- প্রতি কোয়েল পাখির জন্য: ২০০-২৫০ বর্গ সেন্টিমিটার জায়গা দরকার।
- ১০টি পাখির জন্য: ৬০ সেমি × ৩০ সেমি × ২৫ সেমি (লম্বা × চওড়া × উচ্চতা) খাঁচা যথেষ্ট।
- তলদেশের ঢাল: ৫-১০° কোণে তৈরি করলে ডিম গড়িয়ে সামনের দিকে চলে আসবে, যা সংগ্রহ করা সহজ হবে।
- উপাদান: লোহার তার বা মসৃণ বাঁশের কাঠামো ব্যবহার করা ভালো।
২. কোয়েলের সংখ্যা ও স্থানবিন্যাস
- ডিমপাড়া কোয়েল: প্রতি খাঁচায় ৫-১০টি পাখি রাখলে ভালো উৎপাদন পাওয়া যায়।
- বাচ্চা কোয়েল: একসঙ্গে ২০-৩০টি রাখা যায়, তবে বড় হলে আলাদা করতে হবে।
- পুরুষ ও মহিলা অনুপাত: ১টি পুরুষের সাথে ৩-৫টি মহিলা রাখলে ভালো প্রজনন হয়।
৩. খাবার ও পানির ব্যবস্থা
- খাবারের ট্রে: খাঁচার বাইরের দিকে রাখতে হবে যেন খাবার নষ্ট না হয়।
- পানির পাত্র: পানির পাত্র সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে, যেন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ না হয়।
৪. আলোর ব্যবস্থা
- প্রতিদিন ১৪-১৬ ঘণ্টা আলো নিশ্চিত করতে হবে।
- আলোর অভাবে ডিম উৎপাদন কমে যেতে পারে।
- রাতে হালকা লাল বা কম শক্তির আলো ব্যবহার করা যেতে পারে।
৫. তাপমাত্রা ও পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ
- বাচ্চাদের জন্য: প্রথম ৭ দিনে ৩৫-৩৭°C তাপমাত্রা প্রয়োজন, এরপর ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা হয়।
- বয়স্ক কোয়েলের জন্য: ১৮-২৪°C তাপমাত্রা ভালো।
- বাতাস চলাচল: খাঁচা অবশ্যই এমন স্থানে রাখতে হবে যেখানে বাতাস চলাচল ঠিকমতো হয়, কিন্তু ঠান্ডা বাতাস সরাসরি না লাগে।
৬. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
- প্রতিদিন খাবার ও পানির পাত্র পরিষ্কার করতে হবে।
- সপ্তাহে অন্তত ১-২ বার খাঁচার নিচের ময়লা পরিষ্কার করতে হবে।
- নিয়মিত রোগ প্রতিরোধক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।
৭. ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ
- খাঁচার নিচে ঢালু তল বানিয়ে ডিম গড়িয়ে সামনের দিকে আনার ব্যবস্থা করলে সংগ্রহ সহজ হবে।
- ডিম সংরক্ষণের জন্য ১০-১৫°C তাপমাত্রা ভালো।
৮. রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
- সাধারণ সমস্যা: ঠান্ডা লাগা, ডায়রিয়া, কলেরা ইত্যাদি।
- প্রতিরোধের উপায়: খাঁচা পরিষ্কার রাখা, স্বাস্থ্যকর খাবার দেওয়া, এবং টিকা প্রয়োগ করা।
খাঁচায় কোয়েল পালনের সুবিধা
- ✅ কম জায়গায় বেশি পাখি পালন করা যায়।
- ✅ পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা সহজ।
- ✅ ডিম সংগ্রহ সহজ হয়।
- ✅ রোগবালাই কম হয়।
- ✅ উৎপাদনশীলতা বেশি হয়।
সংক্ষেপে সফল কোয়েল পালন পদ্ধতি:
- ✔ সঠিক মাপের খাঁচা ব্যবহার করুন।
- ✔ ভালো মানের খাবার ও পানি সরবরাহ করুন।
- ✔ পর্যাপ্ত আলো ও তাপমাত্রা নিশ্চিত করুন।
- ✔ খাঁচা পরিষ্কার রাখুন ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিন।
- ✔ ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণে যত্নশীল হোন।
আপনি যদি ব্যবসার জন্য কোয়েল পালন করতে চান, তাহলে এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে লাভজনক ফলাফল পাবেন!
আরো পড়ুন ….. ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি: খামার করে মাসে লাখ টাকা ইনকাম

কোয়েল পাখির ভ্যাকসিন তালিকা
বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখতে সঠিক সময়ে টিকা দেওয়া প্রয়োজন কোয়েল পাখিকে। যদিও মুরগির তুলনায় কোয়েলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, তবে সঠিক ভ্যাকসিন না দিলে উৎপাদন কমে যেতে পারে।
কোয়েল পাখির গুরুত্বপূর্ণ ভ্যাকসিন ও প্রয়োগ সময়সূচি
রোগের নাম | ভ্যাকসিনের নাম | প্রথম ডোজ (বয়স অনুযায়ী) | পরবর্তী ডোজ (রিফ্রেশ/বুস্টার) | প্রয়োগ পদ্ধতি |
---|---|---|---|---|
নিউক্যাসল ডিজিজ (রানি খেত) | এফ-স্ট্রেন / বিসি৩১ | ৭ দিন বয়সে | ২১ দিন পর (বুস্টার) | পানির সাথে/নাকে-চোখে ফোঁটা |
গামবোরো ডিজিজ | আইবিডি ভ্যাকসিন | ১০-১২ দিন বয়সে | ৪ সপ্তাহ পর (প্রয়োজনে) | পানির সাথে |
মাইকোপ্লাজমোসিস | এমজি ভ্যাকসিন | ২-৩ সপ্তাহ বয়সে | ৬ সপ্তাহ পর (প্রয়োজনে) | পানির সাথে |
ব্রোনকাইটিস | আইবি ভ্যাকসিন | ১৫-২০ দিন বয়সে | ৫ সপ্তাহ পর | পানির সাথে/স্প্রে |
ফাউল পক্স (বসন্ত) | এফপি ভ্যাকসিন | ৪ সপ্তাহ বয়সে | ৪-৫ মাস পর | পাখির ডানার চামড়ায় ফুটো করে |
এভিয়ান এনসেফালোমেলাইটিস | এএই ভ্যাকসিন | ৬ সপ্তাহ বয়সে | ৬ মাস পর | পানির সাথে/ত্বকে ফোঁটা |
ভ্যাকসিন প্রয়োগের সাধারণ নিয়ম
- ✅ ভ্যাকসিন দেওয়ার আগে ও পরে পরিষ্কার পানি নিশ্চিত করুন।
- ✅ গরম বা অতিরিক্ত ঠান্ডা পরিবেশে ভ্যাকসিন দেওয়া এড়িয়ে চলুন।
- ✅ সব পাখিকে যেন সমানভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
- ✅ ভ্যাকসিন ব্যবহারের পর বোতল/পাত্র ধুয়ে ফেলুন এবং সঠিকভাবে সংরক্ষণ করুন।
- ✅ খামারে নতুন পাখি আনলে অন্তত ১৫ দিন আলাদা রাখুন এবং পর্যবেক্ষণ করুন।
কেন ভ্যাকসিন প্রয়োজন?
- ✔ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
- ✔ উৎপাদনশীলতা ও ডিমের হার বৃদ্ধি পায়
- ✔ রোগ সংক্রমণ কমে যায়
- ✔ কোয়েলের মৃত্যুর হার কমায়
যদি খামারের জন্য কোয়েল পালন করেন, তাহলে এই ভ্যাকসিন তালিকা অনুসরণ করলে ভালো ফলাফল পাবেন!
আরো পড়ুন …. নারিশ ফিড দাম: লেয়ার লেয়ার ১ ফিডের দাম ২০২৫ বিস্তারিত
কোয়েল পাখির ঔষধ তালিকা ও ব্যবহার
কোয়েল পাখি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে, তাই সঠিক সময়ে ওষুধ প্রয়োগ করলে রোগের প্রকোপ কমানো যায় এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ রোগ এবং তাদের প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের তালিকা দেওয়া হলো।
১. ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ ও ওষুধ
রোগের নাম | লক্ষণ | ওষুধের নাম | প্রয়োগ পদ্ধতি |
---|---|---|---|
সালমোনেলোসিস (ডায়রিয়া, দুর্বলতা) | সাদা বা হলুদ পাতলা পায়খানা, ক্ষুধামন্দা | এনরোফ্লক্সাসিন (Enrofloxacin), টেট্রাসাইক্লিন (Tetracycline) | পানির সাথে ৩-৫ দিন |
কোলিব্যাসিলোসিস (ই.কোলাই সংক্রমণ) | পাতলা পায়খানা, পাখির দুর্বলতা | এমক্সিসিলিন (Amoxicillin), ট্রাইমেথোপ্রিম (Trimethoprim) | খাবার বা পানির সাথে ৫-৭ দিন |
ক্লস্ট্রিডিয়াল সংক্রমণ | রক্তমিশ্রিত ডায়রিয়া, হঠাৎ মৃত্যু | লিঙ্কোমাইসিন (Lincomycin), মেট্রোনিডাজল (Metronidazole) | পানির সাথে ৩-৫ দিন |
২. ভাইরাসজনিত রোগ ও ওষুধ
রোগের নাম | লক্ষণ | প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা | প্রয়োগ পদ্ধতি |
---|---|---|---|
নিউক্যাসল ডিজিজ (রানি খেত) | শ্বাসকষ্ট, মাথা কাঁপানো, ডিম কমে যাওয়া | ভ্যাকসিন: এফ-স্ট্রেন, বিসি৩১ | ৭ ও ২১ দিনে টিকা |
ফাউল পক্স (বসন্ত) | শরীরে গুটি, মুখে ক্ষত | এফপি ভ্যাকসিন, আয়োডিনযুক্ত ওষুধ | ক্ষত স্থানে পভিডোন আয়োডিন |
গামবোরো ডিজিজ | দুর্বলতা, ওজন কমে যাওয়া | আইবিডি ভ্যাকসিন, ইলেক্ট্রোলাইট ও গ্লুকোজ | পানির সাথে |
৩. পরজীবীজনিত রোগ ও ওষুধ
রোগের নাম | লক্ষণ | ওষুধের নাম | প্রয়োগ পদ্ধতি |
---|---|---|---|
কৃমি সংক্রমণ | ওজন কমে যাওয়া, ডিম কমে যাওয়া | এলবেন্ডাজল (Albendazole), লেভামিসল (Levamisole) | পানির সাথে ৩-৫ দিন |
কোকসিডিওসিস | রক্তযুক্ত পায়খানা, দুর্বলতা | সালফাকিনক্সালিন (Sulphaquinoxaline), এমপ্রোলিয়াম (Amprolium) | পানির সাথে ৫-৭ দিন |
বহিঃপরজীবী (উকুন/মাইট) | শরীরে উকুন, চামড়া চুলকানো | আইভারমেকটিন (Ivermectin) | পানির সাথে বা ত্বকে প্রয়োগ |
৪. পুষ্টিগত ঘাটতি ও ওষুধ
সমস্যার নাম | লক্ষণ | ওষুধ/পুষ্টি | প্রয়োগ পদ্ধতি |
---|---|---|---|
ক্যালসিয়াম ঘাটতি | পাতলা খোলসের ডিম, দুর্বলতা | ডি-ক্যালসিয়াম ফসফেট, ক্যালসিয়াম সিরাপ | খাবারের সাথে মিশিয়ে দিন |
ভিটামিন ঘাটতি | ডিম কমে যাওয়া, বৃদ্ধি কম | ভিটামিন এডিই (ADE), ভিটামিন বি কমপ্লেক্স | পানির সাথে |
ডিহাইড্রেশন (পানিশূন্যতা) | পানিশূন্যতা, শরীর দুর্বল | ইলেক্ট্রোলাইট, গ্লুকোজ | পানির সাথে ৩-৫ দিন |
৫. সাধারণ টনিক ও প্রতিরোধমূলক ওষুধ
ওষুধের নাম | ব্যবহার | প্রয়োগ পদ্ধতি |
---|---|---|
লিভার টনিক (Liver Tonic) | লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি | পানির সাথে ৩-৫ দিন |
অ্যান্টিবায়োটিক প্রিমিক্স | সংক্রমণ প্রতিরোধ | খাবারের সাথে |
প্রোবায়োটিক ও প্রিবায়োটিক | পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখা | পানির সাথে |
অতিরিক্ত টিপস:
- ✅ রোগ প্রতিরোধের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
- ✅ টিকা ও ওষুধ ব্যবহারের আগে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- ✅ অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করে রোগ প্রতিরোধের উপর জোর দিন।
- ✅ নতুন পাখি আনলে অন্তত ১৫ দিন আলাদা রাখুন ও পর্যবেক্ষণ করুন।
এভাবে সঠিক ব্যবস্থাপনা ও ওষুধ প্রয়োগ করলে কোয়েল পাখি সুস্থ থাকবে ও ভালো উৎপাদন দেবে!
কোয়েল পাখি কতদিন ডিম দেয়
কোয়েলপাখি সাধারণত ৬-৭ সপ্তাহ বয়সে (৪২-৫০ দিন) ডিম দেওয়া শুরু করে।
ডিম উৎপাদনের সময়কাল ও হার:
- প্রথম ডিম: ৬-৭ সপ্তাহ বয়সে
- প্রতি বছর ডিম উৎপাদন: ২৫০-৩৫০টি (উন্নত ব্যবস্থাপনায়)
- প্রতি দিন ডিম দেওয়ার হার: ৭০-৮০% (যদি ১০টি কোয়েল থাকে, তাহলে প্রতিদিন ৭-৮টি ডিম পাওয়া যেতে পারে)
- সর্বোচ্চ উৎপাদনকাল: ৫-৬ মাস
- ডিম দেওয়া বন্ধ বা কমে যায়: ১০-১২ মাস পর
- পুরো জীবনকালে ডিম উৎপাদন: ১-১.৫ বছর ভালোভাবে ডিম দেয়, এরপর উৎপাদন কমতে থাকে।
উৎপাদন বাড়ানোর উপায়:
- ✅ পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্য (১৮-২০% প্রোটিনযুক্ত লেয়ার ফিড)
- ✅ প্রতিদিন ১৪-১৬ ঘণ্টা আলো নিশ্চিত করা
- ✅ বিশুদ্ধ পানি ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখা
- ✅ বেশি বয়স হলে পুরনো কোয়েল সরিয়ে নতুন কোয়েল যোগ করা
ভালো ব্যবস্থাপনায় কোয়েল পাখি থেকে ১ বছরে অনেক ডিম পাওয়া যায়, যা ব্যবসায়িকভাবে লাভজনক!
কোয়েল পাখির খাবার পাত্র
উপযুক্ত খাবার পাত্র (Feeder) ব্যবহার করা খুব গুরুত্বপূর্ণ কোয়েল পাখির জন্য , কারণ এটি খাবারের অপচয় কমায় এবং পাখিগুলোকে সহজে খেতে সাহায্য করে।
কোয়েল পাখির জন্য খাবার পাত্রের ধরন:
১. প্লাস্টিক বা মেটাল ট্রে ফিডার
- ছোট কোয়েল খামারের জন্য সহজ এবং সাশ্রয়ী।
- সাধারণত লম্বা আকৃতির হয়, যাতে একসঙ্গে অনেক পাখি খেতে পারে।
- খাবার অপচয় কম হয় এবং পরিষ্কার করা সহজ।
২. অটোমেটিক বা গ্র্যাভিটি ফিডার
- বড় খামারের জন্য উপযুক্ত।
- ফিডার থেকে খাবার ধীরে ধীরে নিচে নামে, ফলে খাবার নষ্ট হয় না।
- একবার খাবার দিলে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত চলে।
৩. পাইপ ফিডার (PVC Feeder)
- পিভিসি পাইপ কেটে তৈরি করা যায় এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়।
- পাখির সংখ্যা বেশি হলে ব্যবহার করা ভালো।
- সহজে পরিষ্কার করা যায়।
৪. হ্যাঙ্গিং (ঝুলন্ত) ফিডার
- খাঁচার মধ্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়, যাতে পাখি খাবারের মধ্যে ময়লা বা বিষ্ঠা ফেলতে না পারে।
- খাবার কম নষ্ট হয়।
খাবার পাত্র ব্যবহারের টিপস:
- ✅ প্রতি ১০-১৫টি কোয়েল পাখির জন্য একটি ফিডার ব্যবহার করুন।
- ✅ খাবারের পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করুন যেন ব্যাকটেরিয়া না জন্মায়।
- ✅ খুব বেশি গভীর পাত্র ব্যবহার করবেন না, কারণ এতে পাখি ঢুকে পড়তে পারে।
- ✅ খাবার অপচয় কমাতে পাত্রের উচ্চতা এমনভাবে সেট করুন, যেন পাখি সহজে খেতে পারে কিন্তু ভিতরে ঢুকতে না পারে।
আপনার খামারের আকার অনুযায়ী উপযুক্ত ফিডার বেছে নিলে খাবার ব্যবস্থাপনা ভালো হবে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়বে!
কোয়েল পাখির প্রিয় খাবার কি?
বিভিন্ন ধরনের খাদ্য গ্রহণ করতে পারে কোয়েল পাখি , তবে কিছু খাবার তারা বেশি পছন্দ করে এবং এগুলো তাদের স্বাস্থ্য ও ডিম উৎপাদনের জন্যও ভালো।
কোয়েল পাখির প্রিয় খাবার:
১. শস্য ও দানাদার খাবার (প্রোটিন ও শক্তির প্রধান উৎস)
- ✅ গম – সহজে হজম হয় এবং পুষ্টিকর
- ✅ ভুট্টা – শক্তির ভালো উৎস
- ✅ চাল ও চালের কুঁড়া – হালকা ও সহজপাচ্য
- ✅ সয়াবিন মিল – প্রোটিনের জন্য ভালো
- ✅ সরিষার খৈল – পুষ্টিগুণ বেশি, তবে অতিরিক্ত নয়
২. পোকামাকড় ও প্রাণিজ উৎস (প্রোটিন বৃদ্ধি করে)
- ✅ গুঁড়া করা মাছ (Fish Meal) – ৫০% পর্যন্ত প্রোটিন থাকে
- ✅ কেঁচো (Earthworm) – কোয়েল পাখির প্রিয় খাবার
- ✅ শুঁয়োপোকা বা মিলওয়ার্ম (Mealworm) – প্রাকৃতিকভাবে খেলে বেশি উপকার হয়
৩. সবুজ শাকসবজি ও গাছপালা (ভিটামিন ও খনিজের উৎস)
- ✅ লাউপাতা, কলাপাতা – সহজে হজম হয়
- ✅ গাজর ও শাক-সবজি কুঁচি – ভিটামিন ও মিনারেলের জন্য ভালো
- ✅ ঘাস ও অন্যান্য ছোট পাতা – প্রাকৃতিকভাবে বেশি পছন্দ করে
৪. মিনারেল ও সম্পূরক খাবার (ডিমের শক্ত খোলসের জন্য)
- ✅ ক্যালসিয়াম পাউডার বা ডি-ক্যালসিয়াম ফসফেট
- ✅ ঝিনুকের গুঁড়া (Oyster Shell Powder)
- ✅ লবণ ও গ্রিট (Grit) খাবার – হজমে সাহায্য করে
কিছু বাড়তি টিপস:
- ✔ কোয়েল পাখির খাবারে ১৮-২০% প্রোটিন থাকা দরকার।
- ✔ খাবার বৈচিত্র্য দিলে পাখির উৎপাদনশীলতা বাড়বে।
- ✔ অতিরিক্ত তেলযুক্ত বা লবণযুক্ত খাবার না দেওয়া ভালো।
- ✔ পরিষ্কার পানি সবসময় পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করা জরুরি।
ভালো পুষ্টিগুণযুক্ত খাবার দিলে কোয়েল পাখি দ্রুত বৃদ্ধি পাবে, বেশি ডিম দেবে, এবং সুস্থ থাকবে!
শীতকালে কোয়েল পাখি কি খায়?
শীতকালে কোয়েল পাখির স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও ডিম উৎপাদন বজায় রাখতে উষ্ণ ও পুষ্টিকর খাবার দেওয়া জরুরি। ঠান্ডার কারণে কোয়েলের খাদ্য গ্রহণ কমে যেতে পারে, তাই খাবারে কিছু পরিবর্তন করা দরকার।
✅ শীতকালে কোয়েল পাখির পছন্দের ও উপকারী খাবার
১. শক্তি ও উষ্ণতা বাড়ানোর খাবার
- ✅ ভুট্টার গুঁড়া – শক্তি বৃদ্ধি করে এবং শরীর গরম রাখে
- ✅ গমের ভুসি ও চালের কুঁড়া – সহজে হজম হয় ও তাপ উৎপন্ন করে
- ✅ সয়াবিন মিল – উচ্চ প্রোটিনযুক্ত, যা শীতকালে শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে
২. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার (শরীর গরম ও ডিম উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে)
- ✅ মাছের গুঁড়া (Fish Meal) – প্রচুর প্রোটিন থাকে
- ✅ মিলওয়ার্ম বা শুঁয়োপোকা – কোয়েল পাখির খুব প্রিয় ও প্রাকৃতিক খাবার
- ✅ কেঁচো বা অন্যান্য পোকামাকড় – বাড়তি পুষ্টির জন্য ভালো
৩. ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ খাবার (শীতজনিত দুর্বলতা ও রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে)
✅ সবুজ শাক-সবজি (লাউপাতা, পালং শাক, গাজর কুঁচি) – ভিটামিন ও মিনারেলের ভালো উৎস
✅ ঝিনুকের গুঁড়া ও ক্যালসিয়াম পাউডার – ডিমের খোলস মজবুত রাখে
৪. উষ্ণতা বজায় রাখার জন্য বিশেষ খাবার
- ✅ রসুন ও আদার মিশ্রণ (পরিমাণ মতো) – রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও শরীর গরম রাখে
- ✅ গুড় ও মধু মিশ্রিত পানি (সপ্তাহে ১-২ বার) – শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখে
✅ শীতকালে কোয়েল পাখির যত্ন ও খাবার ব্যবস্থাপনা
- ✔ খাবার ও পানি হালকা গরম রাখা ভালো, যেন পাখি সহজে খেতে পারে।
- ✔ শীতে কোয়েল বেশি খেতে চায়, তাই খাবারের পরিমাণ ১০-১৫% বাড়ানো উচিত।
- ✔ পানি বেশি ঠান্ডা হয়ে গেলে গুড় বা মধু মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
- ✔ গরম পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে, যেন তারা পর্যাপ্ত পানি পান করতে পারে।
- ✔ খাঁচার তাপমাত্রা ১৮-২৪°C বজায় রাখতে হবে, বিশেষ করে রাতে।
শেষ কথা
শীতকালে কোয়েল পাখিকে উষ্ণ, শক্তি ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার দিলে তারা সুস্থ থাকবে এবং ডিম উৎপাদন স্বাভাবিক থাকবে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত আলো ও উষ্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করাও খুব গুরুত্বপূর্ণ!