একটি ইসলামিক ডিজাইনের ছবিতে প্রশ্ন করা হয়েছে, কারা সেই জান্নাতি সাহাবী? নিচে জান্নাতি সাহাবীদের নামের তালিকা সম্পর্কে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

জান্নাতি সাহাবীদের নাম: দুনিয়াতে সুসংবাদপ্রাপ্ত ২০ জন পুরুষ ও মহিলা সাহাবী

[সর্বশেষ আপডেট: 20/11/2025]

আসসালামু আলাইকুম আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা! আশা করি আপনারা সবাই খুব ভালো আছেন।

আচ্ছা, আমরা তো সবাই জান্নাতে যেতে চাই, তাই না? কিন্তু একবার ভাবুন তো, কেমন লাগবে যদি স্বয়ং নবীজি (সাঃ) এই দুনিয়াতেই আপনাকে নাম ধরে ডেকে বলেন, “তুমি জান্নাতি!”? সুবহানাল্লাহ! বিষয়টা ভাবতেই তো শরীরের কাঁটা দিয়ে উঠছে! যাই হোক,

ইসলামের ইতিহাসে ঠিক এমনই কিছু সৌভাগ্যবান পুরুষ ও নারী (সাহাবা, সাহাবী) ছিলেন, যাঁদেরকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তিনি নিজে এই অবিশ্বাস্য সুসংবাদটি দিয়ে গেছেন। তাই আমাদের মনে প্রায়ই একটি প্রশ্ন জাগে যে, কারা সেই ভাগ্যবান ব্যক্তি? বিশেষ করে, জান্নাতি মহিলা সাহাবীদের নামগুলো জানার আগ্রহ তো আমাদের আরও বেশি।

তো আর দেরি কেন? চলুন, আজ আমি সেই (জান্নাতি ২০ সাহাবীর নাম পুরুষ ও মহিলা) সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এই পোস্টে আমরা জান্নাতি ২০ সাহাবীর নাম (পুরুষ ও মহিলা) নিয়ে জানবো এবং পোস্টের শেষে আপনাদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ জান্নাতি সাহাবীদের নামের তালিকা তৈরি করে দেব। এবং প্রথমেই সেই তারকাদের চিনে নিই, যাঁদের জীবনটা ছিল আমাদের জন্য এক একটা গাইডবুক।

তবে আমি আপনাদের সহজভাবে বোঝার জন্য এটিকে দুটি ভাগে ভাগ করেছি প্রথম ভাগে ১০জন পুরুষ জান্নাতি সাহাবীর নাম দিয়ে, এবং পরের ভাগে ১০জন মহিলা জান্নাতি সাহাবীর নাম দিয়েছি।

 জান্নাতি ২০ সাহাবীর নাম

আমি জানি “আশারা মুবাশশারা”  শব্দটা শুনতে একটু কঠিন লাগছে, তাই না? কিন্তু একদম সোজা! এর মানে হলো “সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন”। মানে, সেই দশজন লাকি সাহাবী, যাঁদের নাম নবীজি (সাঃ) একই সাথে এক হাদিসেই বলে দিয়েছেন যে, “তাঁরা জান্নাতি”। (তথ্যসূত্র: তিরমিজি, হাদিস: ৩৭৪৭)। এবার আশা করি বুঝতে পেরেছেন যে, কেন বার বার আশারা মুবাশশারা বলছি।

তাহলে চলুন, সেই ১০জন পুরুষ জান্নাতি সাহাবীর নাম বা সেই সুপারস্টারদের সাথে পরিচিত হওয়া যাক!

দুনিয়াতে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ সাহাবী

ইসলামের ইতিহাসে জান্নাতি দশ সাহাবী বা ‘আশারা মুবাশশারা’-এর মর্যাদা অত্যন্ত উঁচু। চলুন, প্রথমে সেই জান্নাতি সাহাবীর নাম (পুরুষ) তালিকাটি দেখে নিই। তবে আমাদের অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, জান্নাতি নামের অর্থ কি? আসলে, জান্নাতি কোনো নির্দিষ্ট নাম নয়, বরং এটি আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে দেওয়া একটি উপাধি বা পুরস্কার।

১. হযরত আবু বকর (রাঃ) – রাসূলের বেস্ট ফ্রেন্ড!

তিনি ছিলেন ইসলামের প্রথম খলিফা আর আমাদের নবীজি (সাঃ)-এর হিজরতের সময়কার একমাত্র সঙ্গী। বড়দের মধ্যে তিনিই প্রথম ইসলাম কবুল করেন।

তিনার ছিলো ইসলামের জন্য নিজের সবকিছু বিলিয়ে দেওয়ার মতো মন। নবীজি (সাঃ) ভালোবেসে তাঁকে “সিদ্দীক” বা “সবচেয়ে বড় সত্যবাদী” উপাধি দিয়েছিলেন।

২. হযরত উমার (রাঃ) – ইসলামের আয়রন ম্যান!

যিনি ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা। তাঁর সাহস আর ন্যায়বিচারের গল্প তো কিংবদন্তিতুল্য! আর আপনারা নিশ্চয় এই সাহাবীর নাম অনেক বার শনেছেন।

এবং তাঁর ইসলাম গ্রহণে মুসলিমরা এতটাই শক্তিশালী হয়েছিল যে, তারা প্রথমবার কাবা চত্বরে প্রকাশ্যে নামাজ আদায় করেন। এজন্যই তাঁর উপাধি ছিল “ফারুক”, মানে সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী।

৩. হযরত উসমান (রাঃ) – সবচেয়ে বড় দানবীর!

ইনি ইসলামের তৃতীয় খলিফা। নবীজি (সাঃ) এর দুই মেয়েকে বিয়ে করার সৌভাগ্য হওয়ায় তাঁকে “যুন-নুরাইন” বা “দুই জ্যোতির অধিকারী” বলা হয়।

তিনি দান করার জন্য সবসময় দু হাত খোলা রাখতো। মদিনার সেই ভয়ংকর দুর্ভিক্ষের সময় তাঁর মতো করে আর কেউ এভাবে এগিয়ে আসেনি।

৪. হযরত আলী (রাঃ)  আল্লাহর সিংহ!

হয়রত আলী (রাঃ) ছিলেন ইসলামের চতুর্থ খলিফা, নবীজি (সাঃ) এর চাচাতো ভাই আর আদরের মেয়ে ফাতিমা (রাঃ) এর স্বামী।

তিনার জ্ঞান, প্রজ্ঞা আর অবিশ্বাস্য সাহসিকতা ছিলো অসাধারণ। যুদ্ধের ময়দানে তাঁর তলোয়ার ছিল বাতাসের চেয়েও দ্রুত।

৫. হযরত তালহা (রাঃ) – জীবন্ত শহীদ!

 উনি ছিলেন উহুদের যুদ্ধের সেই হিরো! যখন সবাই ছত্রভঙ্গ, তখন হযরত তালহা (রাঃ) একাই নিজের শরীরকে ঢাল বানিয়ে নবীজি (সাঃ)-কে রক্ষা করছিলেন।

তিনার ছিলো এক অসম্ভব ভালোবাসা রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর জন্য। তাঁর সারা শরীর ছিল আঘাতে জর্জরিত, কিন্তু নবীজি (সাঃ)-এর গায়ে একটা আঁচড়ও লাগতে দেননি সুবহানাল্লাহ্।

৬. হযরত যুবাইর (রাঃ) – রাসূলের “হাওয়ারি”!

হযরত যুবাইর (রাঃ) ছিলেন নবীজি (সাঃ) এর ফুফাতো ভাই। এবংনবীজি (সাঃ)-এর প্রতি ছিলো এক আপন দৃশ্য। কারণ নবীজি (সাঃ) নিজেই তাঁকে “হাওয়ারি” বা “আমার একান্ত আপনজন” বলে ডেকেছেন। মাশাআল্লাহ্ কি সৌাভাগ্য তার।

৭. হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) – জিরো থেকে হিরো!

মদিনার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন আমাদের এই ৭ম জান্নাতি সাহাবী। তাঁর ছিলো সততা আর ব্যবসার অবিশ্বাস্য দক্ষতা। মক্কায় সবকিছু ছেড়ে দিয়ে মদিনায় এসে শূন্য হাতে ব্যবসা শুরু করে তিনি আবার সেই সেরা ধনী হয়েছিলেন!

৮. হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) – সেরা তীরন্দাজ!

ইনি এমন একজন সাহাবী ছিলেন, যাঁর দোয়া আল্লাহ সাথে সাথে কবুল করতেন (সুবহানাল্লাহ্)। আর তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি ইসলামের জন্য শত্রুর দিকে তীর নিক্ষেপ করেন। এবং তাঁর প্রতিটি তীর ছিল বিচুক্ষনি সঠিক এবং নিখুঁত।

৯. হযরত সাঈদ ইবনে যায়িদ (রাঃ) – নীরব সাধক!

 ইনি ছিলেন হযরত উমার (রাঃ)-এর বোন জামাই। যাঁর উদেশ্য ছিলো ইসলামের জন্য গোপনে কাজ করে যাওয়া। তিনি এবং তাঁর স্ত্রী প্রথমদিকে ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে অন্যতম, কিন্তু তিনি সবসময় প্রচারের আড়ালে থাকতেই ভালোবাসতেন।

১০. হযরত আবু উবাইদাহ (রাঃ) উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে বিশ্বস্ত ব্যক্তি!

তিনি ছিলেন একজন মহান সেনাপতি এবং গভর্নর। আর তাঁর ছিলো অবিশ্বাস্য সততা এবং আমানতদারি। নবীজি (সাঃ) নিজেই তাঁকে “আমিনুল উম্মাহ” বা “উম্মতের সবচেয়ে বিশ্বাসী লোক” উপাধি দিয়েছিলেন (সুবহানাল্লাহ্)। কি সৌভাগ্য ছিলো তাদের, আর তাঁদের বিশ্বাস, ভালোবাসা, উদারতা, বিলাশীতা, সহনশীলতা, একত্বতা,এবং মানষিকতা ছিলো অসাধরণ। যাদেরকে আমরা আইডল হিসেবে বিবেচিত করতে পারি।

জান্নাতের সু-সংবাদ প্রাপ্ত ১০ জন নারী

আমরা তো জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন পুরুষ সাহাবীর কথা জানলাম তাই না?। কিন্তু আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আপনারা কি জানেন, ইসলামের ইতিহাসে এমন অনেক মহীয়সী নারীও ছিলেন, যাঁদের ছিলো ত্যাগ, ঈমান এবং প্রজ্ঞা, আকাশের তারার মতো উজ্জ্বল? তাই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বিভিন্ন সময়ে তাঁদেরকেও জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।

তাঁরা শুধু স্ত্রী, মা বা কন্যাই ছিলেন না! তাঁরা ছিলেন ইসলামের প্রথম দিকের মুজাহিদা, জ্ঞানী এবং অনুপ্রেরণার উৎস। এটা বলছি না, এটা হাদিস ই বলে। তবে আমি আমার মত করে শুধুমাত্র আপনাদের সহজ ভাবে বোঝতে চেয়েছি। তাহলে চলুন, আজ আমরা সেই দশজন সৌভাগ্যবতী ১০জন জান্নাতি মহিলা সাহাবীর নাম ও তাঁদের সাথে পরিচিত হই, যাঁরা দুনিয়াতেই জান্নাতের সার্টিফিকেট পেয়েছিলেন।

(বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই দশজনের তালিকাটি “আশারা মুবাশশারা”-এর মতো একটি মাত্র হাদিস থেকে নেওয়া নয়, বরং বিভিন্ন সহিহ হাদিস থেকে সংকলিত।)

জান্নাতি ২০ সাহাবীর নাম মহিলা তালিকা

আমাদের গবেষণায় আমরা দেখেছি যে, পাঠকরা বিশেষভাবে জান্নাতি ২০ নারী সাহাবীর নাম সম্পর্কে জানতে চান। তাই, আপনাদের আগ্রহকে সম্মান জানিয়ে আমরা এই মহীয়সী নারীদের পরিচয় তুলে ধরছি।

১. হযরত খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ (রাঃ) – প্রথম বিশ্বাসী, রাসূলের আশ্রয়

হযরত খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ (রাঃ) ছিলেন উম্মুল মু’মিনিন মানে (বিশ্বাসীদের মা), আমাদের প্রিয় নবীজি (সাঃ)-এর প্রথম এবং সবচেয়ে প্রিয় স্ত্রী। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি নবীজি (সাঃ)-এর উপর ঈমান আনেন।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে নিঃশর্ত ভালোবাসা এবং সমর্থন করতেন। ইসলামের সবচেয়ে কঠিন এবং একাকী দিনগুলোতে তিনি ছিলেন নবীজি (সাঃ)-এর সবচেয়ে বড় শক্তি, সান্ত্বনা এবং আশ্রয়। স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা জিব্রাইল (আঃ)-এর মাধ্যমে তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ পাঠান। সুবহানাল্লাহ্…

২. হযরত ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ (সাঃ) – জান্নাতের নারীদের সর্দার

হযরত ফাতিমা (রাঃ) ছিলেন আমাদের প্রিয় নবীজি (সাঃ)-এর কলিজার টুকরা, আদরের কনিষ্ঠ কন্যা এবং হযরত আলী (রাঃ) এর স্ত্রী।

তিনার ধৈর্য, সরলতা এবং পিতার প্রতি গভীর ভালোবাসা ছিলো অটুট। রাসূল (সাঃ) তাঁকে এতটাই ভালোবাসতেন যে, তিনি বলেছেন, “ফাতিমা আমার দেহেরই একটি অংশ”। এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে এক সময় “জান্নাতি নারীদের নেত্রী” হওয়ার সুসংবাদ দেন। সুবহানাল্লাহ্

৩. হযরত আয়িশা বিনতে আবু বকর (রাঃ) – উম্মতের জ্ঞানী শিক্ষিকা

উম্মুল মু’মিনিন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) -এর স্ত্রী এবং হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর কন্যা।

তাঁর ছিলো অসাধারণ জ্ঞান, প্রজ্ঞা এবং স্মৃতিশক্তি। তিনি ছিলেন একজন যুগশ্রেষ্ঠ হাদিস বর্ণনাকারী এবং ফকিহ (ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞ)। উম্মতের নারীরা দ্বীনের বিষয়ে তাঁর কাছ থেকেই সবচেয়ে বেশি জ্ঞান লাভ করতেন।

৪. হযরত মারিয়াম বিনতে ইমরান (আঃ) – ঈসা (আঃ)-এর কুমারী মা

তিনি বনী ইসরাইলের একজন পূণ্যবতী নারী এবং হযরত ঈসা (আঃ)-এর মা। তাঁর ছিলো অবিশ্বাস্য ধৈর্য, পবিত্রতা এবং আল্লাহর উপর অগাধ বিশ্বাস। এবং কোনো পুরুষের স্পর্শ ছাড়াই আল্লাহর হুকুমে গর্ভধারণ করাটা ছিল তাঁর জন্য এক কঠিন পরীক্ষা, এবং সে পরীক্ষায় তিনি সফলভাবে উত্তীর্ণ হন। আর কুরআন মাজিদে তাঁর নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরাও রয়েছে। (সুবহানাল্লাহ্)

৫. হযরত আসিয়া বিনতে মুযাহিম (আঃ) – ফেরাউনের স্ত্রী

ইনিই হলেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় তাগুত বা স্বৈরাচারী শাসক ফেরাউনের স্ত্রী। যাঁর ছিলো ঈমানের অবিশ্বাস্য দৃঢ়তা। রাজপ্রাসাদের সমস্ত ভোগ-বিলাসিতা এবং আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে তিনি এক আল্লাহর উপর ঈমান আনেন (সুবহানাল্লাহ্)। সে তাগুত ফেরাউনের চরম অত্যাচার এবং নির্যাতন সহ্য করেও তিনি ঈমান থেকে একবিন্দুও বিচ্যুত হননি (সুবহানাল্লাহ্)।

৬. হযরত সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত (রাঃ) – ইসলামের প্রথম শহীদ

হযরত ইয়াসির (রাঃ)-এর স্ত্রী হলেন হযরত সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত (রাঃ) এবং হযরত আম্মার (রাঃ)-এর মা।

শাহাদাতের অমর সাহস। ইসলামের জন্য জীবন উৎসর্গকারী তিনিই প্রথম নারী। কাফেরদের অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি শাহাদাত বরণ করেন, কিন্তু তিনি কোনো ভাবেই ঈমান ছাড়েননি। তাঁর এই ত্যাগ কিয়ামত পর্যন্ত সকল মুসলিমের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। (সুবহানাল্লাহ্)।

৭. উম্মে আইমান (রাঃ)

উম্মে আইমান (রাঃ) ছিলেন রাসূল (সাঃ)-এর পিতার একজন দাসী এবং পরবর্তীতে রাসূল (সাঃ)-এর পালক মাতা।

কিন্তু নবীজি (সাঃ)-এর প্রতি ছিলো মায়ের মত ভালোবাসা। এবং তিনি শিশুকাল থেকে নবীজি (সাঃ)-কে নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করেছেন। রাসূল (সাঃ) তাঁকে “আমার মায়ের পর মা” বলে সম্বোধন করতেন। (সুবহানাল্লাহ), ভেবে দেখেছেন একজন দাসী হয়েও কি সৌভাগ্য তাঁর?

৮. উম্মে হারাম বিনতে মিলহান (রাঃ)

একজন আনসারী সাহাবী এবং রাসূল (সাঃ)-এর খালা (মতান্তরে) ছিলেন উম্মে হারাম বিনতে মিলহান (রাঃ)

শাহাদাতের জন্য তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিলো তাঁর। তিনি রাসূল (সাঃ)-এর কাছে দোয়া চেয়েছিলেন যেন তিনি ইসলামের প্রথম নৌ-অভিযানে অংশগ্রহণ করতে পারেন এবং শহীদ হতে পারেন। আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেন এবং তিনি নৌ-অভিযানেই শাহাদাত বরণ করেন।

৯. উম্মে সুলাইম (রাঃ)

হযরত আনাস (রাঃ)-এর মা হলেন উম্মে সুলাইম (রাঃ), যিনি দশ বছর ধরে নবীজি (সাঃ)-এর সেবা করেছিলেন।

তাঁর ছিলো অসাধারণ প্রজ্ঞা এবং ধৈর্য। আর তিনি তাঁর বিয়ের মোহরানা হিসেবে স্বামীর ইসলাম গ্রহণকে নির্ধারণ করেছিলেন, যা ছিল এক অনন্য ঘটনা। সন্তানের মৃত্যুতেও তিনি যেভাবে ধৈর্য ধারণ করেছিলেন, তা এক বিরল দৃষ্টান্ত ছিলো ইতিহাসের পাতায়।

১০. উম্মে রূমান (রাঃ)

উম্মে রূমান (রাঃ) ছিলেন হযরত আয়িশা (রাঃ)-এর মা এবং হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর স্ত্রী।

রাসূল (সাঃ)-এর পরিবারের প্রতি নিঃস্বার্থ সেবা এবং ভালোবাসা দিয়ে সব সময় আগলে রাখতেন। তিনি ছিলেন একজন অত্যন্ত ধৈর্যশীলা এবং ইবাদতকারী নারী।

জান্নাতি ২০ সাহাবীর নাম মহিলা সহ তালিকা একনজরে

আমার প্রিয় পাঠক, এতক্ষন অনেক পড়েছেন কিন্তু আপনাদের সুবিধার জন্য এতক্ষণের দীর্ঘ আলোচনার সারসংক্ষেপ হিসেবে নিচে দুনিয়াতে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ২০ জন পুরুষ ও মহিলা সাহাবীর নাম একটি সুন্দর টেবিলে একত্রিত করে লিখে দিলাম।

১০ জন জান্নাতি পুরুষ সাহাবী (আশারা মুবাশশারা)

ক্র সাহাবীর নাম যে বিশেষণে তিনি পরিচিত
হযরত আবু বকর (রাঃ) সিদ্দীক / রাসূলের বেস্ট ফ্রেন্ড
হযরত উমার (রাঃ) ফারুক / ইসলামের আয়রন ম্যান
হযরত উসমান (রাঃ) যুন-নুরাইন / সবচেয়ে বড় দানবীর
হযরত আলী (রাঃ) আসাদুল্লাহ / আল্লাহর সিংহ
হযরত তালহা (রাঃ) জীবন্ত শহীদ
হযরত যুবাইর (রাঃ) হাওয়ারি / রাসূলের একান্ত আপনজন
হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) জিরো থেকে হিরো / সফল ব্যবসায়ী
হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) সেরা তীরন্দাজ / মুস্তাজাবুদ দা’ওয়াত
হযরত সাঈদ ইবনে যায়িদ (রাঃ) নীরব সাধক
১০ হযরত আবু উবাইদাহ (রাঃ) আমিনুল উম্মাহ / উম্মতের বিশ্বস্ত ব্যক্তি

১০ জন জান্নাতি মহিলা সাহাবী

ক্র সাহাবীর নাম যে বিশেষণে তিনি পরিচিতা
হযরত খাদিজা (রাঃ) উম্মুল মু’মিনিন / প্রথম বিশ্বাসী
হযরত ফাতিমা (রাঃ) জান্নাতি নারীদের নেত্রী
হযরত আয়িশা (রাঃ) উম্মতের জ্ঞানী শিক্ষিকা
হযরত মারিয়াম (আঃ) ঈসা (আঃ)-এর কুমারী মা
হযরত আসিয়া (আঃ) ফেরাউনের স্ত্রী / ঈমানের প্রতীক
হযরত সুমাইয়া (রাঃ) ইসলামের প্রথম শহীদ
উম্মে আইমান (রাঃ) রাসূল (সাঃ)-এর পালক মাতা
উম্মে হারাম বিনতে মিলহান (রাঃ) প্রথম নৌ-অভিযানের শহীদ
উম্মে সুলাইম (রাঃ) প্রজ্ঞা ও ধৈর্যের প্রতীক
১০ উম্মে রূমান (রাঃ) আবু বকর (রাঃ)-এর স্ত্রী / আয়িশা (রাঃ)-এর মা

আমার প্রিয় কথা

আলহামদুলিল্লাহ্।  উফফফফফফ…….! কি যে সৌভাগ্যবান ছিলেন তাঁরা, তাই না?

তো আমার প্রিয় পাঠক ভাই ও বোনেরা, আশা করি জান্নাতি সাহাবীদের নাম ও তাঁদের জীবন সম্পর্কে আপনাদের মনের সব কৌতূহল মেটাতে পেরেছি। আমরা দেখলাম, তাঁরা কেউ ছিলেন রাসূল (সাঃ)-এর বেস্ট ফ্রেন্ড, কেউ ছিলেন ইসলামের আয়রন ম্যান, আবার কেউ ছিলেন উম্মতের জ্ঞানী শিক্ষিকা।

তাঁদের জীবন থেকে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সাঃ)-এর প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসা এবং দ্বীনের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করা। তাঁরা কোনোদিন জান্নাতে যাওয়ার জন্য আমল করেননি, বরং তাঁরা আমল করেছিলেন আল্লাহকে খুশি করার জন্য, আর আল্লাহ খুশি হয়েই তাঁদেরকে জান্নাতের সার্টিফিকেট দিয়েছেন।

আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে তাঁদের মতো ঈমান ও আমল করার তৌফিক দান করুন এবং জান্নাতে তাঁদের সঙ্গী হওয়ার সৌভাগ্য দান করুন। (আমিন)।

এখন আপনার পালা! এই ২০জন সৌভাগ্যবান সাহাবীদের নাম ও তাদের সম্পর্কে জেনে আপনার কেমন লাগলো? আর আপনার সবচেয়ে প্রিয় সাহাবী কে? নিচে কমেন্ট করে আমাদের সাথে আপনার অনুভূতি শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু!

এতক্ষন আমার প্রিয় ডট কম এর সাথে থাকার জন্য অসংখ ধন্যবাদ।


জান্নাতি সাহাবী সম্পর্কে সচরাচর জিজ্ঞাস্য (FAQs)

প্রশ্ন ১: “আশারা মুবাশশারা” নামটি কোন হাদিসে এসেছে?
উত্তর: এই ১০ জন সাহাবীর নাম এক হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, যা ইমাম তিরমিজি (রঃ) তাঁর সুনানে (হাদিস: ৩৭৪৭) বর্ণনা করেছেন।

প্রশ্ন ২: সাহাবী কারা?
উত্তর: যাঁরা ঈমান অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে দেখেছেন, তাঁর সাহচর্য লাভ করেছেন এবং ঈমানের উপর মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁদেরকে সাহাবী বলা হয়।

প্রশ্ন ৩: ২০ জন জান্নাতি সাহাবীর কি কোনো নির্দিষ্ট তালিকা আছে?
উত্তর: না, একসাথে ২০ জনের কোনো নির্দিষ্ট তালিকা নেই। তবে ১০ জন পুরুষ সাহাবীর (আশারা মুবাশশারা) একটি নির্দিষ্ট তালিকা আছে। আমরা এই পোস্টে পাঠকদের সুবিধার জন্য ১০ জন পুরুষ এবং ১০ জন মহিলার তালিকা একত্রিত করে ২০ জনের নাম উল্লেখ করেছি।

প্রশ্ন ৪: এই ২০ জন ছাড়া আর কেউ কি জান্নাতি নন?
উত্তর: অবশ্যই আরও অনেক সাহাবী জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন। যেমন: বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল সাহাবী, বাইয়াতে রিদওয়ানে অংশগ্রহণকারী সাহাবীগণ এবং আরও অনেকে। এই ২০ জনের তালিকাটি হলো সবচেয়ে বিখ্যাত এবং বহুল প্রচলিত।

প্রশ্ন৫: জান্নাতি ২০ সাহাবীর নাম মহিলা তালিকাটি কি নির্দিষ্ট?

উত্তর: না, একসাথে ২০ জন মহিলার কোনো নির্দিষ্ট তালিকা নেই। তবে, বিভিন্ন হাদিস থেকে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত বিখ্যাত নারীদের নাম সংকলন করে “জান্নাতি ২০ সাহাবীর নাম মহিলা” তালিকাটি তৈরি করা হয়, যা আমরা এই পোস্টে আলোচনা করেছি।

প্রশ্ন৬: জান্নাতি সাহাবীর পিক বা ছবি খোঁজা কি ঠিক?

উত্তর: সাহাবীদের প্রতি আমাদের সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা রয়েছে, কিন্তু তাঁদের কোনো ছবি আঁকা বা খোঁজা ইসলামে উৎসাহিত করা হয় না। আমরা তাঁদের জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করব।