আমার প্রিয় পাঠক ভাই বোন ও বন্ধুরা, আমরা অ্যাসিডিটি দূর করার জন্য ঠিক কতই না চেষ্টা করি। কিন্তু ভালো করে ভেবে দেখুন তো সত্যি কি তেমন ফলাফল পান? না! তবে আমি গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় নিয়ে বেশ বিস্তারিত এই আরটিকেলটি সাজিয়েছি। পড়ে দেখুন….
আমি জানি … বিয়ে বাড়ি বা দাওয়াতে গিয়ে কাচ্চি বিরিয়ানি, তেহারি বা বোরহানি দেখার পর নিজেকে আর আটকে রাখা যায় না! তাই না? আর তাছাড়া আমরা বাঙালি, খাওয়ার সময় অনেকে এগুলো ভুলেই যায়।
আর খাওয়ার ঠিক আধা ঘণ্টা পরেই শুরু হয় আসল ঘটনা, বুক জ্বালাপোড়া করা, অস্বস্তিকর অবস্থা আর পেট ফাঁপা! ঠিক তখনই আমরা সোজা ফার্মেসিতে গিয়ে ২০-৩০ টাকার একটা গ্যাসের ওষুধ কিনে খেয়ে ফেলি।
আর মনে করি, যাক তাহলে মনে হয় এবার বাঁচা গেল! কিন্তু না, আপনি কি জানেন, ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় গুলো কি কি? আর জানা থাকলে আপনাকে আর যখন তখন ওষুধের ওপর নির্ভর করতে হবে না? কারণ ওষুধ ছাড়া সুস্থ থাকার মজাই আলাদা।
তাই আজকে আমি শুধু সমাধানই দেব না, বরং অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিক এর লক্ষণ, পিঠে ব্যথা এবং আলসার থেকে বাঁচার উপায় গুলো নিয়েও খোলামেলা কিছু কথা বলব। চলুন, শুরু করি তাহলে….
পেটে গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ কী কী?
শুধু পেট ফাঁপলেই যে গ্যাস্ট্রিক হয়, তা কিন্তু না! আমাদের শরীর আমাদেরকে অনেক ধরণের সিগন্যাল দেয়, যা আমরা বেশির ভাগই বুঝতে পারি না।
অনেকেই আবার জানতে চান, যে পেটে গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ কী কী? তাহলে আসুন সাধারণ কিছু লক্ষণের বাইরেও আসল সমস্যাগুলো চিনে নিই।
-
বুক জ্বালাপোড়া করা (Heartburn) মানে, পাকস্থলীর এসিড যখন খাদ্যনালী দিয়ে উপরে উঠে আসে।
-
পেট ফুলে থাকা: এসময় মনে হয় পেটের ভেতর বেলুন ফোলানো আছে।
-
বমি বমি ভাব: তখন সব সময় একটা অস্বস্তি বা টক ঢেকুর ওঠে।
-
গ্যাস্ট্রিক বুকে ব্যথা: ভাই অনেক সময় গ্যাসের ব্যথা বুকে উঠে আসে, যা অনেকে হার্ট অ্যাটাক ভেবে মারাত্মক ভয় পেয়ে যান। তবে ব্যথাটা যদি নড়াচড়া করলে বাড়ে বা কমে, তবে বুঝে নিয়েন ভাই এটা গ্যাসের ব্যথা।
-
গ্যাস্ট্রিক থেকে পিঠে ব্যথা: মন দিয়ে পড়ুন এটা খুবই কমন কিন্তু আমরা গুরুত্তই দিই না। ভাইজান পেটের গ্যাস যখন খুব বেশি বেড়ে যায় এবং ওপরের দিকে চাপ দেয়, তখন সেই ব্যথা পিঠ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। হয়তো হাজার হাজার মানুষ প্রতি মাসে গ্যাস্ট্রিক থেকে পিঠে ব্যথা হলে কি করবে, তার সমাধান খুঁজছে…।
প্রিয় ভাই, যদি দেখেন যে পেটের ব্যথা খুব তীব্র হচ্ছে এবং পিঠ বা ঘাড়ের দিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে, তবে দেরি না করে দয় করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
অথবা আপনি সাধারণ গ্যাস্ট্রিক দূর করার জন্য নিচের এই উপায় গুলি ফলো করতে পারেন। তার পরেও বেশি রকম সমস্য মনে হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে ১০টি জাদুকরী ঘরোয়া উপায়
ভাই বেশির ভাগই ফার্মেসির ওষুধ দীর্ঘদিন সেবনে সাইড ইফেক্ট থাকে, যেমন হাড় ক্ষয় বা কিডনির সমস্যা ইত্যাদি… তবে তা থেকে বাঁচতে চাইলে আপনার রান্নাঘরই হতে পারে সেরা হাসপাতাল। নিচে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় গুলো দেওয়া হলো যা দাদি-নানিদের আমল থেকে বিশেষ পরীক্ষিত:
১. আদা (Ginger): আদা হলো, আমাদের পেটের সমস্যার ন্যাচারাল মেডিসিন। এক টুকরো আদা লবণের সাথে চিবিয়ে খান অথবা আদা চা পান করুন। এটি পেটের গ্যাস ভ্যানিশ করতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে।
২. জিরা পানি: এক গ্লাস পানিতে এক চামচ জিরা ফুটিয়ে সেই পানিটা ছেঁকে হালকা গরম অবস্থায় পান করুন। এটি হজমশক্তি বাড়াতে মাস্টার।
৩. লবঙ্গ (Clove): অ্যাসিডিটি শুরু হলেই ২-৩টি লবঙ্গ মুখে রেখে চুষে খান। কারণ এর রস পাকস্থলীর এসিড নিয়ন্ত্রণ করে।
৪. তুলসী পাতা: সকালে খালি পেটে ৩-৪টি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে গ্যাসের সমস্যা ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারে না।
৫. ডাবের পানি: শরীর ঠান্ডা করতে এবং পিএইচ ব্যালেন্স ঠিক রাখতে ডাবের পানির বিকল্প নেই। এটি তাৎক্ষণিক আরাম দেয়।
আরো আছে
৬. ঠান্ডা দুধ: গরম দুধ নয়, ফ্রিজের ঠান্ডা দুধ এক কাপ খেয়ে নিন। ক্যালসিয়াম এসিড শুষে নেয় এবং জ্বালাপোড়া কমায়।
৭. বেকিং সোডা: এক গ্লাস পানিতে আধা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে খেলে তাৎক্ষণিক আরাম পাওয়া যায় (তবে এটি নিয়মিত খাওয়া ঠিক নয়)।
৮. পুদিনা পাতা: এটি পেট ঠান্ডা রাখে। পুদিনা পাতার রস বা চাটনি হজমে দারুণ সাহায্য করে।
৯. সঠিক স্লিপিং পজিশন: খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়বেন না। আর শোয়ার সময় বাম কাত হয়ে শোবেন। বিজ্ঞানের ভাষায়, এতে পাকস্থলীর এসিড খাদ্যনালীতে উঠে আসতে পারে না।
ইসলামে সুন্নাহ হলো ডান কাতে শোয়া। আর চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে Acid Reflux কমাতে বাম কাতে শোয়া ভালো।
দুইটিই সত্য কিন্তু উদ্দেশ্য আলাদা।
১০. কুসুম গরম পানি: সকালে উঠে এবং রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস কুসুম গরম পানি পান করুন। এটি পেটের বর্জ্য বের করে দিতে সাহায্য করে।
ভাই এগুলো কিন্তু ঘরোয়া উপায়, আর এগুেলো কোনো ডাক্তারের কথা না তাই বলে কাজ করে না তাও না। অনেকেরই এভাবেই সেরে যায়।
গ্যাস্ট্রিক আলসার: লক্ষণ ও বাঁচার উপায়
তো ফ্রেন্ডস, গ্যাস্ট্রিককে অবহেলা করলে সেটা আলসারের দিকে মোড় নিতে পারে, যা খুবই বিপদজনক।
তাই গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে আমাদের স্বচ্ছ ধারণা থাকা উচিত। ঠিক আছে নিচে দেখুন….
আলসারের লক্ষণ:
-
দীর্ঘদিন ধরে পেটের উপরের অংশে তীব্র ব্যথা যদি থাকে, তাহলে এগুলো আলসারের লক্ষণ হতে পারে… ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
-
খালি পেটে ব্যথা বাড়ে, খাবার খেলে কিছুটা কমে।
-
কালো পায়খানা বা বমির সাথে রক্ত আসা।
-
হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া। ইত্যাদি…
গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীর খাদ্য তালিকা:
যদি আপনার আলসার ধরা পড়ে, তাহলে তো লোভকে একটু শাসন করতেই হবে বস! তাই না? তাহলে কি কি খাবেন আর কি কি খাবেন না।
-
যা খাবেন: সেদ্ধ খাবার, পেঁপে, লাউ, কলা, দই এবং প্রচুর পানি খাবেন। এটা আপনার জন্য খুবই জরুরী।
-
যা খাবেন না: অতিরিক্ত তেল, ঝাল, মসলা, ভাজাপোড়া, চা-কফি এবং ধূমপান একদম বাদ দিতে হবে ব্রো। না হয় পস্তাবেন আর বলবেন এটা কি হলো আমার সাথে।
প্রায় জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্নত্তর (FAQ) গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় বিষয়ে:
প্রশ্ন: গ্যাসের সবচেয়ে ভালো ঔষধ কোনটি?
উত্তর: সত্যি বলতে, গ্যাসের সবচেয়ে ভালো ঔষধ হলো আপনার লাইফস্টাইল পরিবর্তন করা। তবে খুব প্রয়োজনে এন্টাসিড জাতীয় সিরাপ
(যেমন Gaviscon) বা ডাক্তারের পরামর্শে পিপিআই (PPI) গ্রুপের ওষুধ (যেমন Omeprazole) খেতে পারেন। তবে ঘরোয়া উপায়ই সেরা এবং নিরাপদ।
প্রশ্ন: গ্যাস্ট্রিক বুকে ব্যথা হলে কী করব?
উত্তর: প্রথমে ঠান্ডা পানি পান করুন এবং সোজা হয়ে বসুন। বাম কাত হয়ে বিশ্রাম নিন।
যদি ব্যথা বাম হাতে ছড়িয়ে পড়ে বা শরীর ঘেমে যায়, তবে এটি হার্টের সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে দ্রুত হাসপাতালে যান।
প্রশ্ন: ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় গুলো কতদিন মানব?
উত্তর: এগুলো কোনো ওষুধ নয়, তাই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। আপনি এগুলোকে অভ্যাসে পরিণত করলে সারাজীবন গ্যাস্ট্রিক মুক্ত থাকতে পারবেন।
আমার প্রিয় শেষ কথা
আমার প্রিয় বন্ধু রা, সুস্থ থাকাটা আসলে আমাদের একটা অভ্যাসের ব্যাপার। আজ থেকেই বাইরের ভাজাপোড়া কমিয়ে দিয়ে এই ১০টি টিপস ফলো করা শুরু করুন। দেখবেন, গ্যাস্ট্রিক আপনাকে আর জ্বালাতে পারবে না। মনে রাখবেন, শরীর আপনার, তাই যত্নটা আপনাকেই নিতে হবে।
আর আমার লেখা এই আরটিকেলটি যদি আপনার একটুও উপকারে আসে, তবে আপনার গ্যাস্ট্রিক আক্রান্ত বন্ধুটির সাথে শেয়ার করে তাকেও বাঁচার পথ দেখান! সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
ডিসক্লেমার: এই ব্লগের তথ্যগুলো সাধারণ সচেতনতা এবং ঘরোয়া টোটকা হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
এটি কোনোমতেই পেশাদার ডাক্তারি পরামর্শের বিকল্প নয়। দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা বা তীব্র ব্যথার ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


