আসলে সোনা বিশ্বজুড়ে এক মূল্যবান ধাতু হিসেবে স্বীকৃত। এমনকি এটি শুধুমাত্র অলংকার তৈরিতে নয়, বরং বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, এবং ভবিষ্যতের নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। যেহেতু সোনার বিভিন্ন ধরন, মূল্য এবং বৈশিষ্ট্য নিয়ে অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে। সেহুত আজকে আমরা জেনে নেব সেই সব সোনার দাম, নাম, এবং বিভিন্ন ধরনের সোনা সম্পর্কে বিস্তারিত। আটিকেটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন আপনার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
সোনার দাম কীভাবে নির্ধারণ হয়?
প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল সোনার দাম । আন্তর্জাতিক বাজার, ডলারের মান, তেল এবং অন্যান্য ধাতুর মূল্য, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক স্থিতি ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে সোনার দাম ওঠানামা করে। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের বাজারে সোনার দাম আন্তর্জাতিক বাজারের উপর নির্ভরশীল হলেও দেশীয় শুল্ক, কর এবং অন্যান্য খরচের কারণে স্থানীয়ভাবে ভিন্ন হতে পারে।
সোনার বিভিন্ন নাম ও ধরন
সোনার মান এবং খাঁটি হওয়ার ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রকারের নাম দেওয়া হয়। সোনার খাঁটিতার পরিমাপ করা হয় ক্যারেট (Karat) দ্বারা। নিচে সোনার কয়েকটি প্রধান প্রকার নিয়ে আলোচনা করা হলো:
- খাঁটি সোনা (Pure Gold – 24 ক্যারেট)
- ২৪ ক্যারেট সোনা একদম খাঁটি, অর্থাৎ এতে কোনো মিশ্রণ থাকে না।
- এটি নরম এবং নমনীয় হওয়ায় অলংকার তৈরিতে সরাসরি ব্যবহার করা হয় না। সাধারণত এটি বিনিয়োগ বা বার হিসেবে কিনতে ব্যবহার করা হয়।
- ২২ ক্যারেট সোনা (22K Gold)
- এতে প্রায় ৯১.৬% খাঁটি সোনা এবং বাকি ৮.৪% অন্যান্য ধাতু (যেমন তামা বা রুপা) মেশানো হয়।
- ২২ ক্যারেট সোনা সাধারণত গহনা তৈরিতে ব্যবহার করা হয় কারণ এটি খাঁটি হলেও কিছুটা মজবুত।
- ১৮ ক্যারেট সোনা (18K Gold)
- এতে প্রায় ৭৫% খাঁটি সোনা এবং বাকি ২৫% অন্যান্য ধাতু মিশ্রিত থাকে।
- ১৮ ক্যারেট সোনার অলংকার অনেকটা মজবুত এবং স্টাইলিশ হওয়ায় এটি ব্যাপক জনপ্রিয়।
- ১৪ ক্যারেট সোনা (14K Gold)
- এতে প্রায় ৫৮.৫% খাঁটি সোনা এবং বাকি ৪১.৫% অন্যান্য ধাতু থাকে।
- ১৪ ক্যারেট সোনার গহনা টেকসই এবং অনেকদিন ধরে রঙ ধরে রাখে।
- ১০ ক্যারেট সোনা (10K Gold)
- এতে প্রায় ৪১.৭% খাঁটি সোনা এবং বাকি অংশ অন্যান্য ধাতুর মিশ্রণ।
- এটি খরচ সাশ্রয়ী হলেও অনেক ক্ষেত্রে খাঁটি সোনার গহনার মতো মান ধরে রাখতে পারে না।
কোন সোনা কেনা উচিত?
- বিনিয়োগের জন্য: ২৪ ক্যারেট খাঁটি সোনা সবচেয়ে উপযুক্ত, বিশেষ করে সোনার বার বা কয়েন আকারে।
- অলংকারের জন্য: ২২ ক্যারেট এবং ১৮ ক্যারেট সোনা ভালো অপশন, কারণ এগুলো টেকসই এবং লম্বা সময় ধরে ব্যবহার করা যায়।
- দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য: ১৪ ক্যারেট বা ১০ ক্যারেট সোনার গহনা ভালো, কারণ এগুলো শক্ত এবং সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে সোনার বাজার ও দাম
বাংলাদেশে সোনার দাম প্রতিদিন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (BAJUS) দ্বারা নির্ধারিত হয়। দেশীয় বাজারে সোনার চাহিদা, আমদানি শুল্ক, এবং আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্য ওঠানামার ভিত্তিতে সোনার দাম পরিবর্তিত হয়। সুতরাং যারা সোনা কিনতে চান, তাদের জন্য বাজারের চলমান দামের আপডেট রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
আজ, ৮ নভেম্বর ২০২৪, বাংলাদেশে সোনার বাজারের সর্বশেষ মূল্য অনুযায়ী মোটামুটি দাম:
- ২২ ক্যারেট সোনার দাম প্রতি গ্রাম ১১,৮৯২ টাকা।
- ২১ ক্যারেট সোনার দাম প্রতি গ্রাম ১১,৩৫১ টাকা।
- ১৮ ক্যারেট সোনার দাম প্রতি গ্রাম ৯,৭৩০ টাকা।
- সনাতন পদ্ধতির সোনা প্রতি গ্রাম ৭,৯৮৭ টাকা।
এই মূল্য বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (BAJUS) এর সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী নির্ধারিত হয়েছে। মূল্য পরিবর্তনশীল হওয়ার কারণে প্রতিদিন তা পরিবর্তিত হতে পারে।
সর্বশেষ তথ্য জানতে চাইলে আপনার স্থানীয় জুয়েলার্স বা BAJUS-এর ওয়েবসাইট অনুসরণ করতে পারেন।
উপসংহার
অতএব সোনার বিভিন্ন প্রকারের মধ্যে পার্থক্য বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যখন আপনি বিনিয়োগ বা গহনা কেনার পরিকল্পনা করছেন। খাঁটি সোনা বিনিয়োগের জন্য ভালো, তবে গহনার জন্য ১৮ ক্যারেট বা ২২ ক্যারেট সোনা বেশি ব্যবহার উপযোগী।