২০ হাজার টাকার মধ্যে সেরা মোবাইল ফোন

১০-২০হাজার টাকার মধ্যে বাংলাদেশের সেরা ১০টি মোবাইল ফোন

২০ হাজার টাকার মধ্যে সেরা মোবাইল ফোন

আপনার বাজেট ২০,০০০ টাকা, কিন্তু বাজারে এত ফোনের ভিড়ে কোনটা কিনবেন ভেবে মাথা ঘুরছে? চিন্তার কারণ নেই!

আপনার এই দ্বিধা দূর করতেই আমি নিজে সেরা কয়েকটি ফোন নিয়ে এই তালিকাটি তৈরি করেছি।

এখানে শুধু স্পেসিফিকেশন নয়, বরং দৈনন্দিন ব্যবহারে পারফরম্যান্স, ক্যামেরা এবং ব্যাটারি লাইফ সবকিছু যাচাই করে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো সহজভাবে তুলে ধরেছি। চলুন, আপনার জন্য সেরা ফোনটি খুঁজে বের করা যাক!

এখানে আমি দামের সাথে সব মিলিয়ে আমার রেটিং দিয়েছি।

মডেলের নাম দাম (আনুমানিক) কি সেরা? কারণ আমার রেটিং
iQOO Z9x 5G ১৮,৮০০ টাকা সেরা ভ্যালু ও গেমিং Snapdragon 6 Gen 1, ৬০০০mAh ব্যাটারি ৮.৭/১০
Samsung Galaxy M14 ১৪,৯৯৯ টাকা ব্যাটারি ও দৈনন্দিন কাজ ৬,০০০ mAh দানবীয় ব্যাটারি, স্যামসাং-এর নির্ভরযোগ্যতা ৮.৫/১০
Realme P1 5G ২০,০০০+ টাকা টপ ক্লাস পারফরম্যান্স ও গেমিং Dimensity 7050, AMOLED ডিসপ্লে, ৪৫W চার্জিং ৮.৮/১০
Moto G64 5G ২০,২০০ টাকা ক্লিন সফটওয়্যার ও অল-রাউন্ডার বিজ্ঞাপনমুক্ত অ্যান্ড্রয়েড, OIS ক্যামেরা, ৬০০০mAh ব্যাটারি ৮.৩/১০
Vivo T3x 5G ২০,৯৯৯ টাকা স্টাইল, ব্যাটারি ও পারফরম্যান্স Snapdragon 6 Gen 1, ৬০০০mAh ব্যাটারি, স্টাইলিশ ডিজাইন ৮.৩/১০
OnePlus Nord N30 SE 5G ১৬,৯৯৯ টাকা OnePlus ফ্যান ও ক্লিন সফটওয়্যার OxygenOS (ক্লিন), 5G সাপোর্ট ৮.২/১০
Realme 12x 5G ১৯,৯৯৯ টাকা স্টাইলিশ ডিজাইন ও ফাস্ট চার্জিং প্রিমিয়াম লুক, ৪৫W চার্জিং, ব্যালেন্সড পারফরম্যান্স ৮.২/১০
Redmi 12 4G ১৬,৯৯৯ টাকা প্রিমিয়াম ডিজাইন ও বড় ডিসপ্লে গ্লাস বডি, ৬.৭৯” ৯০Hz ডিসপ্লে ৮.০/১০
Realme Narzo 50A ১৪,০০০ টাকা এন্ট্রি-লেভেল গেমিং ও ব্যাটারি Helio G85 গেমিং চিপসেট, ৬০০০mAh ব্যাটারি ৭.৮/১০
Infinix Hot 12 Play ১২,৬০০ টাকা সবচেয়ে কম বাজেটের জন্য বিশাল ৬.৮২” ডিসপ্লে, ৬০০০mAh ব্যাটারি ৭.৫/১০
আমি এগুলো বিক্রি করিনা তাই আমার লিখা দাম থেকে ধারণা নেবেন মাত্র। আর মোবাইল শপে গিয়ে দামদর করে কিনবেন।
কারন যারা বিক্রি করেন তারা তাদের দামেই বিক্রি করেন আমার দামে নয়।
মোবাইল শপে এমন অনেক পাবেন ১০-২০হাজার টাকার মধ্যে বাংলাদেশের সেরা মোবাইল ফোন খালি ১০টি না শত শত পাবেন।

১. Samsung Galaxy M14: ব্যাটারি কিং

যারা একবার চার্জ দিয়ে দেড় থেকে দুই দিন পর্যন্ত ফোন ব্যবহারের স্বাধীনতা চান, এবং পাওয়ার ব্যাংক ব্যাবহার করার ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে চান, তাদের জন্য Samsung Galaxy M14 একটি সেরা পছন্দ।

এটি মূলত দৈনন্দিন ভারী ব্যবহার এবং মোটামুটি গেমিংয়ের জন্য তৈরি করা হয়েছে।

✅ ভালো দিক (Pros):

এর প্রধান আকর্ষণ হলো ৬,০০০ এমএএইচ ব্যাটারি। সাধারণ ব্যবহারে এটি অনায়াসে ২ দিন পর্যন্ত চলতে পারে। যারা ইউটিউবে ভিডিও দেখেন বা লম্বা সময় ধরে ক্লাস করেন, তারা এই ফোনটি চোখবুজে কিনতে পারেন।

আর Samsung এর নিজস্ব Exynos 1330 প্রসেসরটি দৈনন্দিন কাজে (যেমন: ফেসবুকিং, ব্রাউজিং, মেসেজিং) খুবই সাবলীল। Call of Duty বা Free Fire-এর মতো জনপ্রিয় গেমগুলো মিডিয়াম গ্রাফিক্সে আরামসে খেলতে পারবেন। 

এই ফোনে দিনের আলোতে এর ৫০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা দিয়ে বেশ সুন্দর ও ডিটেইলসহ ছবি তোলা যায়। এবং সামাজিক মাধ্যমে আপলোড করার জন্য ছবির মান যথেষ্ট ভালোই থাকে। 

Samsung এর ব্র্যান্ডের ওপর মানুষের আস্থা আছে এবং এর One UI সফটওয়্যার ব্যবহারের অভিজ্ঞতা বেশ পরিষ্কার ও ব্যবহারকারী-বান্ধব পেয়েছি।

❌ দুর্বল দিক (Cons):

কি আর বলবো এই ফোনের বক্সের সাথে ফাস্ট চার্জার দেওয়া থাকে না, যা এই বিশাল ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার জন্য আমাদরে সময়কে কিছুটা আরো বাড়িয়ে দেয়। 

এর PLS LCD ডিসপ্লের কালার বেশ ভালো, তবে AMOLED প্যানেলের মতো অতটা ভাইব্রেন্ট আর আকর্ষণীয় নয়, যা এই বাজেটে কিছু ফোনে পাওয়া যায়। এটা হলে মনেহয় ভালই হতো কিন্তু কি আর করার।


আমার মতে এই বাজেটে আপনি যদি ব্যাটারিকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন, আর বাকি সবকিছু (ক্যামেরা, পারফরম্যান্স) মোটামুটি ভালো হলেই চলে, তাহলে এই ফোনটি আপনার জন্য একটি সেরা ফোন বা প্রিয় ফোন হতে পারে। Samsung এর নির্ভরযোগ্যতা তো সাথে থাকছেই তাইনা?

২. Redmi 12 4G  দামে কম মানে ভালো

যারা কম বাজেটে এমন একটি ফোন নিতে চান যে হাতে নিলে বেশ দামী দামী মনে হবে, এবং বড় ডিসপ্লে ভিডিও বা সিনেমা দেখতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য Redmi 12 4G একটি সেরা ১০টি মোবাইলের মধ্যে একটি হবে।

✅ ভালো দিকগুলো (Pros)

সত্যি বলতে কি, এই ফোনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো এর ডিজাইন। পেছনের গ্লাস বডি এবং ক্যামেরা বসানোর স্টাইল উফ্..  এটিকে বাজেট ফোন হিসেবে পরিচয় দিতে মন চায় না। ফোনটা হাতে নিলে বেশ প্রিমিয়াম একটা অনুভূতি হয়, যা এই দামে পাওয়াটা আমার কছে খুব কঠিন লাগে।

এর ৬.৭৯ ইঞ্চির বিশাল FHD+ ডিসপ্লেটি ইউটিউব বা নেটফ্লিক্স দেখার অভিজ্ঞতাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছিলো। আর ৯০ হার্জ (90Hz) রিফ্রেশ রেট থাকায় ফেসবুক বা ওয়েবসাইটে স্ক্রলিং করার সময় একদম মসৃণ এবং আরামদায়ক অনুভূতি পাচ্ছিলাম।

দিনের আলোতে এর ৫০ মেগাপিক্সেল মূল ক্যামেরা দিয়েই খুব ভালো মানের ছবি তোলা যায়। তবে এই ফোনের বড় কথা হলো এর ৮ মেগাপিক্সেল আলট্রাওয়াইড ক্যামেরা, যা এই বাজেটের অনেক ফোনেই পাওয়া যায় না। গ্রুপ ছবি বা বড় কোনো জায়গার ছবি তোলার জন্য এটি খুবই প্রয়োজনীয়।

৫,০০০mAh ব্যাটারি থাকায় সাধারণ ব্যবহারে আপনার অনায়াসেই পুরো একটি দিন পার হয়ে যাবে, যা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করতে হবে না দেইখেন।

❌ দুর্বল দিকগুলো (Cons):

এই মোবাইল গেমিংয়ের জন্য নয় আর এই ফোনের Helio G88 প্রসেসরটি দৈনন্দিন সব কাজ (ব্রাউজিং, ভিডিও দেখা) ভালোভাবে সামলে নিলেও, এটি কোনো গেমিং-কেন্দ্রিক প্রসেসর নয়।

হালকা-পাতলা গেম খেলা গেলেও, Call of Duty-এর মতো হাই-গ্রাফিক্সের গেম খেলার সময় ল্যাগ বা ফ্রেম ড্রপ দেখতে পেয়েছিলাম, তবে আপনি তেমন বুঝতে পারবেন না।

দিনের আলোতে ক্যামেরা যেমন ভালো ছবি তোলা যাচ্ছিলো, রাতের বেলা বা কম আলোতে ছবির মান কিছুটা সাধারণ মানের মনে হতে পারে আপনার কাছে, যা এই দামের ফোনগুলোর-ই একটি সাধারণ সমস্যা।

ব্যাটারি বড় হলেও বক্সের চার্জারটি ১৮ ওয়াটের, তাই ফোনটি ০ থেকে ১০০% চার্জ হতে প্রায় দুই ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যাবে।

কিন্তু কিছু করার নেই তো তাই না? কাছে অনেক টাকা থাকলে তো আরো ভালো মানের ফোন কিনতাম আর আরো জোরে চার্জ করতাম। কি বলেন?

আপনার কাছে যদি ফোনের ডিজাইন, স্টাইল এবং একটি বড় ও সুন্দর ডিসপ্লে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে এই ফোনটি আপনার মন  কেড়ে নেবে। দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য এটি একটি শক্তিশালী প্যাকেজ।

তবে আপনি যদি একজন কঠিন গেমার হন অথবা রাতের বেলার ফটোগ্রাফি আপনার প্রধান লক্ষ্য হয়, তাহলে হয়তো আপনাকে তালিকার অন্য ফোনগুলোও একবার দেখতেই হবে ব্রো।

৩. OnePlus Nord N30 SE 5G বাজেটের মধ্যে প্রিমিয়াম

এই ফোনটি মূলত যারা OnePlus ব্র্যান্ডটিকে ভালোবাসেন আর কোনো রকম বিজ্ঞাপন বা অপ্রয়োজনীয় অ্যাপের (Bloatware) ঝামেলা ছাড়া একটি পরিষ্কার সফটওয়্যার এর ফিচার চান, আমার মনে হয় তাদের জন্য এই ফোনটি বানানো হয়েছে।

সাথে 5G থাকায় ভবিষ্যতের জন্যও আপনি থাকবেন নিশ্চিন্ত।

✅ ভালো দিকগুলো (Pros):

 এই ফোনের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো এর OxygenOS। কোনো বিরক্তিকর বিজ্ঞাপন নেই, কোনো অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ নেই, একদম পরিষ্কার একটি ইউজার ইন্টারফেস।

ব্যবহার করলেই বুঝতে পারবেন এটা। মানে ব্যবহারের সময় মনেই হবে না যে আপনি একটি বাজেট ফোন ব্যবহার করছেন।

যদিও বাংলাদেশে 5G এখনো সেভাবে শুরু হয়নি, কিন্তু এই ফোনটি আপনাকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি রাখবে। একবার 5G চালু হয়ে গেলে আপনি হাই-স্পিড ইন্টারনেটের মজা নিতে পারবেন।

আর এতে আছে Snapdragon 695 প্রসেসরটি একটি পরীক্ষিত এবং নির্ভরযোগ্য চিপসেট। দৈনন্দিন সব কাজ, যেমন ব্রাউজিং, সোশ্যাল মিডিয়া, ভিডিও দেখা ইত্যদি এগুলো পানির মতো সামলে নেবে।

তবে হ্যাঁ, এটি গেমিংয়ের রাজা নয়, মানে ফ্রি-ফায়ার খেলতে পারবেন কিন্তু চ্যালেঞ্জ করে না। এটার 5000mAh ব্যাটারি দিয়ে অনায়াসে আপনার একদিন চলে যাবে।

আর সাথে থাকা ৩৩ ওয়াটের ফাস্ট চার্জার দিয়ে বেশ দ্রুতই ফোনটি চার্জ করা যাচ্ছিলো, যা অনেক Redmi সেটের এর চেয়ে বেশী জোরে আরকি।

❌ দুর্বল দিকগুলো (Cons):

কাগজে-কলমে এই ফোনে ১০৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা থাকলেও, সত্যি বলতে এর পারফরম্যান্সে আমি আহামরি কিছু পাইনি। দিনের আলোতে বেশ ভালোই ছবি আসছিলো, কিন্তু কম আলোতে বা রাতের বেলা ছবির মান খুব একটা না.. নরমাল।

শুধু মেগাপিক্সেল দেখেই ক্যামেরা বিচার করলে আপনি ভুল করবেন।

তবে এই দামে AMOLED ডিসপ্লে আশা করলে আপনাকে হতাশ হতে হবে। এর LCD ডিসপ্লেটির মান ভালো, তবে AMOLED-এর মতো আকর্ষণীয় বা ভাইব্রেন্ট রঙ এখানে পাবেন না বুঝছেন।

সত্যি বলতে, একই দামে হয়তো অন্য ব্র্যান্ডে এর চেয়ে ভালো গেমিং পারফরম্যান্স বা উন্নত ক্যামেরার ফোন পেয়ে যাবেন। এখানে আপনি মূলত OnePlus-এর ব্র্যান্ড এবং সফটওয়্যার অভিজ্ঞতার জন্য কিনবেন। ঠিক আছে?

দেখুন ভাই, সোজা কথা হলো আপনার মূল চাহিদা যদি হয় একটি ঝামেলাহীন ক্লিন সফটওয়্যার, OnePlus ব্র্যান্ড আর 5G সাপোর্ট, তাহলে এই বাজেটে এর চেয়ে ভালো অপশন খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

এটি আপনাকে আপনার মনের পছন্দ আর একটি প্রিমিয়াম অভিজ্ঞতা দেবে।

কিন্তু আপনি যদি একজন গেমিং ইউটিউবার হন বা আপনার কাছে সেরা ক্যামেরা পারফরম্যান্সই মূল কথা হয়,

তাহলে এই বাজেটে আরও ভালো অপশন কিন্তু বাজারে আছে, সত্যি বলছি! সেদিকে দেখতে পারেন। আমি বলবো গেমারদের জন্য এটা না ভাই।

৪. Realme P1 5G বাজেটের মধ্যে সেরা

যারা মূলত গেমিং এবং ইউটিউবিং রকেট এর মতো ফাস্ট চান তাদের জন্য। আর ফোনের ডিসপ্লেটাও চান টপ ক্লাস, তাদের জন্য Realme P1 5G একটি দারুন ফোন। মানে, এটি একটি পারফরম্যান্স কেন্দ্রিক ফোন যা আপনার টাকা উসুল করে দেবে হা হা হা..।

✅ ভালো দিকগুলো (Pros):

এই ফোনের আসল ঘটনা হলো এর MediaTek Dimensity 7050 প্রসেসর। সত্যি বলতে, ২০,০০০ টাকার আশেপাশে এই চিপসেট পাওয়াটা ব্যাপার নয় ব্যাপারস্। দৈনন্দিন কাজ তো পানির মতো চলবেই,

সাথে Call of Duty, PubG Mobile,Free Fire এর মতো হাই-গ্রাফিক্সের গেমও খুব ভালো সেটিংসে আরামসে খেলতে পারবেন।মজার ব্যাপার হলো পারফরম্যান্সের দিক থেকে এটি তালিকার প্রায় সব ফোনকে পেছনে ফেলে দিছে।

যেখানে এই বাজেটের অনেক ফোন LCD ডিসপ্লে দিচ্ছে, সেখানে Realme দিচ্ছে ১২০ হার্জ (120Hz) রিফ্রেশ রেটের একটি অসাধারণ AMOLED ডিসপ্লে।

এর রঙ এতটাই ভাইব্রেন্ট আর কালো রঙ এতটাই গভীর যে, ভিডিও দেখা বা গেমিং করে না দেখলে আপনি বিশ্বাসই করবেন না।

আর ৫,০০০mAh ব্যাটারি তো আছেই, যা দিয়ে একদিন আরামে চলে যাবে। আর চার্জিং এর ব্যাপারে কি বলবো এর ৪৫ ওয়াটের SuperVOOC ফাস্ট চার্জিং। মাত্র ৩০ মিনিটেই ফোনটি প্রায় ৫০% চার্জ হয়ে যায়, ভাবা যায়? মাথা নস্ট করা কথা।

তাদের ডিজাইন নিয়ে বরাবরই সচেতন Realme , আর এই ফোনটিও আলাদা কিছু নয়। এর পেছনের ক্যামেরা ডিজাইন এবং ফিনিক্স ডিজাইন (Phoenix Design) পুরাই আমার গার্লফ্রেন্ডের মত হা হা হা.., যা কাছে থাকলে নিজেকে একটু সাবার থেকে আলাদাই লাগে আর কি।

❌ দুর্বল দিকগুলো (Cons):

দেখুন ভাই, এই ফোনটি যেহেতু পারফরম্যান্সকে মাথায় রেখে বানানো হয়েছে, তাই ক্যামেরার দিকে বিশাল ছাড় দিতেই হবে।

এর ৫০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা দিয়ে দিনের আলোতে ভালো ছবি আসে, কিন্তু কম আলোতে বা রাতের বেলা ছবির মান আপনাকে হয়তো সন্তুষ্ট করতে পারবে না।

আবার এতে কোনো আলট্রাওয়াইড ক্যামেরাও নেই। এছাড়া OnePlus-এর মতো এখানে একদম ক্লিন সফটওয়্যার অভিজ্ঞতা পাবেন না।

Realme UI-তে কিছু অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ (Bloatware) এবং মাঝে মাঝে বিজ্ঞাপন দেখতে হতে পারে, যা কারো কারো কাছে বিরক্তিকর লাগতে পারে। তবে আমি কোন বিজ্ঞাপন পাইনি।

ডিজাইন দেখতে সুন্দর হলেও, ফোনটির বডি কিন্তু প্লাস্টিকের তৈরি, যা Redmi 12-এর গ্লাস বডির মতো অতটা প্রিমিয়াম অনুভূতি দেবে না। এটা আমার কাছে খুব ভালো লাগেনি।

সোজা সাপটা কথা হলো আপনার প্রধান এবং একমাত্র লক্ষ্য যদি হয় সেরা গেমিং এবং স্মুথ পারফরম্যান্স, আর আপনি ক্যামেরার দিকে না তাকান, তাহলে চোখ বন্ধ করে এই বাজেটে Realme P1 5G কিনে ফেলুন।

এটি আপনাকে পারফরম্যান্সের দিক থেকে হতাশ তো করবেই না, বরং অবাক করে দেবে কথা দিলাম।

কিন্তু আপনি যদি একজন ফটোগ্রাফি লাভার হন বা ভালো ক্যামেরাও দরকার বেশি হয়, তাহলে হয়তো তালিকার অন্য ফোনগুলো আপনার জন্য আরও ভালো হবে।

৫. Vivo T3x 5G স্টাইলিস

এমন একটি স্টাইলিশ ফোন চাচ্ছেন যা একবার চার্জ দিলে লম্বা সময় চলবে, এবং দৈনন্দিন সব কাজ ও মোটামুটি আর ভালো গেমিং আরামসে চলবে, তাদের জন্য Vivo T3x 5G আমি এর নাম দিয়েছি অল-রাউন্ডার ফোন।

✅ ভালো দিকগুলো (Pros):

এই ফোনের সবচেয়ে বড় চমক হলো সবই তবে এর ৬,০০০ mAh ব্যাটারি। মানে, সাধারণ ভাবে ব্যবহারে অনায়াসেই দুই দিন পর্যন্ত চার্জের চিন্তা করতে হয়নি। দিনে বার বার চার্জের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারবেন।

যারা লম্বা সময় ধরে ফোন ব্যবহার করেন, তাদের জন্য এটা ফোন।

এখানে Snapdragon 695 নয়, বরং তার চেয়েও নতুন এবং শক্তিশালী Snapdragon 6 Gen 1 প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। এই চিপসেটটি খুবই পাওয়ার এফিশিয়েন্ট এবং গেমিংয়ের জন্যও অনেক ভালো।

পারফরম্যান্সের দিক থেকে যা বুঝলাম.. এটি আপনাকে হতাশ করবে না, একদম নিশ্চিত থাকতে পারেন।

আর ফোনটিতে রয়েছে ৬.৭২ ইঞ্চির একটি বিশাল FHD+ ডিসপ্লে, সাথে আছে ১২০ হার্জ (120Hz) রিফ্রেশ রেট। ফেসবুক বা ওয়েবসাইটে স্ক্রলিং করার সময় যে অসাধারণ অনুভূতি পাবেন বলার ভাষা খুজে পাবেন না।

বিশাল ব্যাটারি সাথে আছে তো কি হয়েছে? সাথেই থাকে ৪৪ ওয়াটের ফাস্ট চার্জিং সুবিধা।

মানে, চার্জ শেষ হয়ে গেলেও খুব দ্রুতই আপনি ফোনটিকে আবার ব্যবহারের জন্য দ্রুতই চার্জ করে নিতে পারবেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে না।

আরেকটু বলি??  হালকা পানি বা ধুলোবালি থেকে সুরক্ষার জন্য IP64 রেটিং এবং ডুয়াল স্টেরিও স্পিকারের মতো ছোট ছোট ফিচারগুলো আপনার ফোন ব্যবহারে আরো ভালো লাগবে। আমি কোনো ফোন বিক্রেতা নইরে ভাই যে আমি বললেই আপনাকে নিতে হবে?  

❌ দুর্বল দিকগুলো (Cons):

ভাই, Vivo সাধারণত ক্যামেরার জন্য পরিচিত, কিন্তু এই ফোনের ক্ষেত্রে “ফটোগ্রাফির জন্য ভালো” কথাটা একটু বেশি হয়ে যায়।

এর ৫০ মেগাপিক্সেল মূল ক্যামেরা দিনের আলোতে খুব সুন্দর এবং ভাইব্রেন্ট ছবি তোলে, যা Vivo-এর নিয়ম মাফিক।

কিন্তু কম আলোতে বা রাতের বেলা ছবির মান একটু কমই হয়। আর সবচেয়ে বড় ঘাটতি হলো, এতে কোনো আলট্রাওয়াইড ক্যামেরা নেই, যা Redmi 12 দিয়ে দিচ্ছে।

এই দামে Realme P1 5G যেখানে চোখ ধাঁধানো AMOLED ডিসপ্লে দিচ্ছে, সেখানে Vivo-র LCD ডিসপ্লেটি আপনাকে কিছুটা হতাশ করতে পারে। যদিও এর ডিসপ্লের মান বেশ ভালো, তবে AMOLED-এর মতো ডিপ ব্ল্যাক বা ভাইব্রেন্ট রঙ এখানে পাবেন না।

Vivo-র Funtouch OS এ কিছু অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ (Bloatware) আগে থেকেই ইনস্টল করা থাকে, যা অনেকের কাছেই বিরক্তিকর মনে হতে পারে। আমারও খারাপ লাগে এগুলো দেওয়ার এত কি দরকার আছে?

আমার কথা হলো আপনার প্রধান চাহিদা যদি হয় একটি দেখতে সুন্দর ও স্টাইলিশ ফোন, যা একবার চার্জ দিলে লম্বা সময় চলবে এবং দৈনন্দিন সব কাজ ও মোটামুটি গেমিং আরামসে চলবে

মানে “দামে কম মানে ভালো”, তাহলে Vivo T3x 5G আপনি এটি নিতে পারেন। এর ব্যাটারি এবং নতুন প্রসেসর আপনাকে মুগ্ধ করে দেবে।

কিন্তু, আপনি যদি সেরা ক্যামেরা পারফরম্যান্স চান, বিশেষ করে একটি আলট্রাওয়াইড লেন্স আপনার দরকার হয়, অথবা আপনি যদি AMOLED ডিসপ্লের ফ্যান হন,

তাহলে এই বাজেটে তালিকার অন্য ফোনগুলো, যেমন Realme P1 5G, আপনার জন্য আরও ভালো অপশন হতে পারে।

৬. iQOO Z9x 5G গরিবের গেমিং কিং

যারা খরচ করা প্রতিটি টাকার সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স চান, আর গেমিংয়ের সময় মাথা হিট হয়ে যায়, কি বলবো.. মনে হয় এটা তাদের জন্যই বানানো হয়েছে

iQOO Z9x 5G। সোজা কথায়, কম টাকায় পাওয়ারফুল গেমিং চাইলে, আমি বলবো মাথা গরম না করে এটা গেম খেলার জন্য হলে নিয়ে ফেলেন ওকে!।

✅ ভালো দিকগুলো (Pros):

কি আর বলব, এই ফোনেও Vivo T3x 5G এর মতো সেই হেব্বী Snapdragon 6 Gen 1 প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। মানে বুঝতেছেন, ১৭-১৮ হাজার টাকায় আপনি ২২ হাজার টাকা দামের ফোনের পারফরম্যান্স পাচ্ছেন!

এটাকি বিশাল ব্যাপার নয়? যেটাতে Call of Duty, PubG এর মতো বড় গেমগুলো একদম গড়গড়া ভাবে চলবে, তাইলে আবার কি লাগে?

আবার দেওয়া আছে বিশাল ৬,০০০mAh ব্যাটারি। মানে, টানা গেমিং বা ভিডিও দেখার পরও দিন শেষে চার্জ থাকবে মাথাই নষ্ট মামা!। পাওয়ার ব্যাংক কোম্পানি তো এবার শেষ!

ভয় নেই এই বিশাল ব্যাটারির সাথে আছে ৪৪ ওয়াটের ফাস্ট চার্জিং। মানে চার্জ নিয়েও কোনো টেনশন নাই! খুব দ্রুতই আপনার গেমিং বা কাজের জন্য ফোন হবে রেডী। কি ভাবছেন! মিছা কথা? না রে ভাই ফোনটা ব্যবহার করলেই বুঝবেন।

ফোনটিতে রয়েছে ৬.৭২ ইঞ্চির একটি বিশাল FHD+ ডিসপ্লে, সাথে আছে ১২০ হার্জ (120Hz) রিফ্রেশ রেট। গেমিংয়ের সময় বা স্ক্রলিং করার সময় যে স্মুথনেসটা পেয়েছি, তা এক কথায় অসাধারণ ছিলো।

❌ দুর্বল দিকগুলো (Cons):

ব্রো, এত কম দামে এত পাওয়ারফুল প্রসেসর আর ব্যাটারি দেওয়ার পরও ক্যামেরার কথা খুব খারাপ বোলবো তাও না।

তবে এ দিকে তো একটু ছাড় দিতেই হবে, তাই না? এর ৫০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা দিয়ে দিনের আলোতে টুকটাক ছবি তোলার কাজ চলে যাবে, কিন্তু এর থেকে বেশি কিছু আশা করাটা একটু বোকামি হবে।

আর হ্যাঁ, এতে আলট্রাওয়াইড ক্যামেরা থাকলে ভালোই হতোযেহেতু iQOO হলো Vivo রই একটি সাব-ব্র্যান্ড, তাই এখানেও আপনি Funtouch OS পাবেন। মানে, কিছু হাবিজাবি অ্যাপ (Bloatware) আগে থেকেই দেওয়া থাকে

যা অনেকের কাছেই বিরক্তিকর লাগতে পারে। তবে ব্যাপার না এটা আমরা বেশ অভ্যস্ত।

ফোনটি হাতে নিলে একটু বড়সড় এবং ভারি মনে হচ্ছিলো, কারণ এর ভেতরে বিশাল একটা ব্যাটারি আছে। আর বডিটাও প্লাস্টিকের তৈরি, যা খুব একটা প্রিমিয়াম ফিল দেবে না।

একদম খোলাখুলি কথা বলি। আপনার কাছে যদি ক্যামেরার চেয়ে পারফরম্যান্স এবং ব্যাটারি লাইফ লক্ষ গুণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে এই মুহূর্তে এই বাজেটে iQOO Z9x 5G-এর চেয়ে ভালো ফোন আর একটাও নেই।

এটি অনেকটা Vivo T3x 5G-এর যমজ ভাই, কিন্তু আরও একটু কম দামে পাওয়া যাচ্ছে।

যারা শুধু গেমিং, ইউটিউবিং আর দৈনন্দিন ভারী কাজ করার জন্য একটি পাওয়ারফুল ফোন খুঁজছেন, তারা চোখ বন্ধ করে এটা নিয়ে নিন।

কথা দিচ্ছি, পারফরম্যান্সের দিক থেকে এটি আপনাকে একবিন্দুও হতাশ করবে না, বরং আবার এখানে এসে কম্মেন্ট করে বলবেন যে কেমন ফোন এটা।

৭. Moto G64 5G

আর এই ফোনের ব্যাপারে তেমন কিছু বলবো না। যারা স্টক অ্যান্ড্রয়েডের মতো একটি পরিষ্কার, সিম্পল এবং ফাস্ট সফটওয়্যার পেতে চান, তাদের জন্য Moto G64 5G ভালো হবে। নিচে বর্ননা করেছি ঝটফট দেখে নিন।

✅ এই ফোনের ভালো দিকগুলো (Pros):

এই ফোনের সবচেয়ে বড়, মানে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ আমরা যা পেয়েছি তা হলো এর সফটওয়্যার। কোনো ফালতু অ্যাপ নেই, কোনো বিরক্তিকর নোটিফিকেশন বা বিজ্ঞাপন নেই।

শুধু আপনি আর আপনার ফোন, মাঝখানে আর কোন ভিলেন নাই! যারা সিম্পল জিনিস পছন্দ করেন, তাদের জন্য আমি বলবো এটাই সেরা।

এতে ব্যবহার করা হয়েছে MediaTek Dimensity 7025 প্রসেসর। এই চিপসেটটি দৈনন্দিন সব কাজ এবং মোটামুটি ভালো গেমিংয়ের জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী। অ্যাপ ওপেন, স্ক্রলিং করা, মাল্টিটাস্কিং সবকিছুতেই ফাস্ট মনে হচ্ছিলো।

তাও আবার দেওয়া হয়েছে বিশাল ৬,০০০mAh ব্যাটারি। মানে, সাধারণ ব্যবহারে অনায়াসেই দুই দিন পার করে দিতে পারবেন। আমি পরো চার্জ ফুরাতেই পারিনি। কি বলবো! ব্যাটারি নিয়ে কোনো চিন্তাই করতে হবে না।

কি ভাবছেন, ক্লিন সফটওয়্যার দিছে মানে ক্যামেরা ভালো না? না ভাই! এর ৫০ মেগাপিক্সেল মূল ক্যামেরার সাথে OIS (Optical Image Stabilization) দেওয়া আছে।

এর ফলে ছবি তোলার সময় বা ভিডিও করার সময় হাত হালকা কাঁপাকাঁপি করলেও ছবি বা ভিডিও নষ্ট হয় না, বেশ স্থির থাকে। দিনের আলোতে ছবির মান বেশ ভালোই ছিলো। সাথে একটি ৮ মেগাপিক্সেল আলট্রাওয়াইড ক্যামেরাও আছে, যা একটি বিশাল প্লাস পয়েন্ট।

IP52 ওয়াটার-রিপেলেন্ট ডিজাইন (হালকা পানি টানির ছিটা এর কিছু হবেনা), স্টেরিও স্পিকার এবং ৩.৫মিমি হেডফোন জ্যাকের মতো ছোট ছোট দরকারি ফিচারগুলোও এটাতে পেয়ে যাবেন।

❌ দুর্বল দিকগুলো (Cons):

ব্যাটারি বিশাল হলেও, বক্সের চার্জারটি ৩৩ ওয়াটের, যা ৬,০০০mAh ব্যাটারিকে চার্জ করতে কিছুটা বেশি সময় নেয়। Realme বা iQOO-এর মতো ফাস্ট চার্জিং এখানে আশা কইরেন না আবার বুঝেন-ই তো।

আর এই ফোনটিতেও LCD ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও এর ডিসপ্লের কালার এবং ব্রাইটনেস বেশ ভালো, তবুও Realme P1 5G এর AMOLED ডিসপ্লের মতো ভাইব্রেন্ট এবং আকর্ষণীয় না তবে খুব খারও বলবো না চলে।

ফোনটি আসলে প্লাস্টিক বডির তৈরি এবং ডিজাইনটা খুব সাধারণ মানেেই মনে হয়েছে। আহমরি তেমন কিছু না।

যারা খুব স্টাইলিশ বা নজরকাড়া ডিজাইনের ফোন খোঁজেন, তাদের কাছে এটি কিছুটা সাদামাটা লাগতে পারে। যেটা আমার কছেই মনে হয়েছে।


>একদম পরিষ্কার কথা ব্রো। আপনার কাছে যদি একটি ক্লিন এবং সিম্পল সফটওয়্যার সহ ফোন চান তাহলে চোখ বন্ধ করে Moto G64 5G নিয়ে নিতে পারেন। সোজা কথায়, এটি তাদের জন্য যারা “সিম্পল ইজ দ্য বেস্ট” নীতিতে বিশ্বাসী হা হা হা..।

৮. Realme 12x 5G এটার ব্যাপারে নিচে দেখুন

যারা এমন একটি ফোন চান যা দেখতেও সুন্দর, পারফরম্যান্সও বেশ ভালো, আবার চার্জও হয় রকেটের গতিতে, তাদের জন্য Realme 12x 5G একটি দারুণ হবে। কারণ এটি কোনো এক দিকে সেরা না হলেও, সব মিলিয়ে প্রায় একটি সেরা ফোন। যা বলছি তা মিলিয়ে নিবেন।

✅ ভালো দিকগুলো (Pros):

এই ফোনের মেইন আকর্ষণ হলো এর ৪৫ ওয়াটের SuperVOOC ফাস্ট চার্জিং। মানে, মাত্র ৩০ মিনিটেই আপনার ফোন ০ থেকে ৫০% চার্জ হয়ে যাবে!

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে চার্জে লাগিয়ে নাস্তা করতে করতেই আপনার সারাদিনের জন্য ফোন রেডি বাহ! কি চমৎকার!। চার্জিং স্পিডের দিক থেকে এটি Realme P1-এর মতোই ফাস্ট হবে।

সত্যি বলতে, এই ফোনের ডিজাইন দেখলে মনেই হবে না যে এটি একটি বাজেট ফোন। এর পেছনের বড়সড় গোল ক্যামেরা মডিউল এবং পাতলা বডি এটিকে দেখতে অনেকটা দামী ফোনের মতো একটা লুক দেয়।স্টাইলের দিক থেকে আমি কোনো অভিযোগ করবে না।

ফোনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে MediaTek Dimensity 6100+ প্রসেসর।

এই চিপসেটটি প্রতিদিনের প্রায় সব কাজ (ফেসবুকিং, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ) মনে হবে একদম ইশারাই চলছে!। হালকা মাঝারি গেমিংও আরামে খেলেছি কোনো ল্যাগ ফাগ পাইনি।

এটাতেও  ৬.৭২ ইঞ্চির একটি বিশাল FHD+ ডিসপ্লে আছে, সাথে আছে ১২০ হার্জ (120Hz) রিফ্রেশ রেট। ব্যবহার না করলে বুঝবেন কিভাবে তাই না?!

এই ফোনে একটি ডাইনামিক বাটন (Dynamic Button) আছে, যা দিয়ে আপনি ক্যামেরা চালু করা বা সাইলেন্ট করার মতো কাজ শর্টকাটে করতে পারবেন। সাথে IP54 রেটিং তো থাকছেই, যা হালকা পানি বা ধুলোবালি থেকে অনেকা সেফ রাখবে।

❌ দুর্বল দিকগুলো (Cons):

এই ফোনের দুর্বল দিকগুলোর মধ্যে একটি হলো এর ক্যামেরা। নামে মাত্র দুটি ক্যামেরা থাকলেও, কাজের ক্যামেরা শুধু একটাই, ৫০ মেগাপিক্সেলের মূল সেন্সর।

দিনের আলোতে ছবি ভালো আসলেও, রাতে সাধারণই থাকে ,যা এই বাজেটের Moto G64 বা Redmi 12 দিয়ে দিচ্ছে।

দেখুন ভাই, দৈনন্দিন কাজের জন্য এর পারফরম্যান্স ভালো হলেও, আপনি যদি গেমিংকেই বেশি গুরুত্ব দেন, তাহলে এর বড় ভাই Realme P1 5G নিতে পারেন। আমি অনেক দেখলাম সবদিকেই এগিয়ে ছিলো Realme P1 5G।

এই ফোনটিতে AMOLED ডিসপ্লের কথাআসেনা কারণ এটি AMOLED ডিসপ্লে নয়। ডিসপ্লেটি উজ্জ্বল এবং স্মুথ, কিন্তু Realme P1-এর AMOLED ডিসপ্লের মতো হবে না এটাই বাস্তব হা হ হা..।

বলি আপনার প্রধান চাহিদা যদি হয় একটি স্টাইলিশ এবং প্রিমিয়াম দেখতে ফোন, যা খুব দ্রুত চার্জ হবে এবং দৈনন্দিন সব কাজ ভালোভাবে চলে যাবে, তাহলে Realme 12x 5G আপনার জন্য অন্য ফোন দেখে মাথা পচাবেন না।

কিন্তু, আপনার প্রধান লক্ষ্য যদি হয় সেরা গেমিং পারফরম্যান্স আর সেরা ডিসপ্লে, তাহলে চোখ বন্ধ করে Realme P1 5G এর দিকে যান আর এটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। সিদ্ধান্ত আপনার, প্রয়োজনও আপনার ভেবে দেখুন।

৯. Infinix Hot 12 Play দামে কম মানে ভালো

যাদের বাজেট একদমই দুর্বল, মানে ১১-১২ হাজার টাকার বেশি খরচ করার কোন সুযোগই নেই, আর তেমন কোন প্রধান চাহিদা না হলেও চলবে।

যেমন ভিডিও কলে কথাবলা, ইউটিউব বা সিনেমা দেখা এবং এমন একটি ব্যাটারি যা একবার চার্জ দিলে সহজে ফুরায় না, তাদের জন্য Infinix Hot 12 Play সেরা ভেবেছি।

✅ ভালো দিকগুলো (Pros)

এই ফোনটিতেও দেওয়া হয়েছে বিশাল ৬,০০০mAh ব্যাটারি। মানে, সাধারণ ব্যবহারে অনায়াসেই দুই দিন পার করে দিতে পারবেন। ব্যাটারির দিক থেকে বলবো এই তালিকার অন্যতম সেরা এটাই, কোনো সন্দেহ নেই।

এর ৬.৮২ ইঞ্চির ডিসপ্লেটি এক কথায় বিশাল! মানে একটা সিনেমাহলের মতো ফিল পাবেন হা.হা.হা.হা…। আর ৯০ হার্জ (90Hz) রিফ্রেশ রেট থাকায় স্ক্রলিংয়ের সময়ও বেশ ভালোই ছিলো। এই দামে যে এত কিছু এটাই মেলা।

এই ফোনের সবচেয়ে বড় ভালো দিক হলো এর দাম। এটি আমার প্রিয় তালিকার সবচেয়ে সস্তা ফোন, যা আপনার অনেকগুলো টাকা বাঁচাবে।

দাম অনুযায়ী ফোনটির ডিজাইন বেশ স্টাইলিশ এবং আধুনিক। হাতে নিলে আমি মনে করি খুব একটা সস্তা মনে হবে না।

❌ দুর্বল দিকগুলো (Cons):

এর Unisoc T610 প্রসেসরটি শুধু সাধারণ কাজের জন্য (যেমন: ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব, ভিডিও কল) ঠিকঠাক।

কিন্তু আপনি যদি গেমিং করার কথা ভাবেন বা একসাথে অনেকগুলো অ্যাপ ব্যবহার করতে চান, তাহলে ফোনটি বেশ স্লো হয়ে যাবে এবং আপনাকে হতাশ হয়ে যাবেন। কারণ এটা কোনোভাবেই গেমিং ফোন না।

কি আর বলব, এর ১৩ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে কারণ একটা ক্যামেরা না দিলে কেমন দেখায়, বুঝেনই তো! দিনের আলোতে কোনোমতে কাজ চালানোর মতো ছবি আসে, কেন? কারণ দামটা দেখছেন কত কম।

ডিসপ্লে বড় হলেও, এর রেজোলিউশন কিন্তু HD+, FHD+ নয়। মানে, অন্য ফোনগুলোর মতো অতটা শার্প বা ঝকঝকে ছবি বা ভিডিও এখানে দেখতে পাবেন না। খারাপও লাগবে না।

৬,০০০mAh ব্যাটারিকে চার্জ দেওয়ার জন্য দেওয়া হয়েছে মাত্র ১০ ওয়াটের একটি চার্জার। মানে, ফোনটি ০ থেকে ১০০% চার্জ হতে ৩ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যাবে! রাতে চার্জে দিয়ে সকালে ফুল পাবেন, এর আগে আশা কইরেন না ওকে!!!!

শুনুন ভাইজান, একদম খোলাখুলি বলি। আপনার বাজেট যদি কোনোভাবেই ১২ হাজার টাকার উপরে না যায় বাট একটা স্মার্টফোন দরকার তাইলে নিতে পারেন খুবই খারাপ না।

কিন্তু, আপনি যদি আর মাত্র ২-৩ হাজার টাকা বাজেট বাড়াতে পারেন, তাহলে আমার মনে হয় iQOO Z9x 5G বা Samsung M14-এর মতো ফোনগুলো আপনাকে পারফরম্যান্স, ক্যামেরা, গেমিং ফোন নিতে পারতেন।

আমার ব্যক্তিগত পরামর্শ হবে, সম্ভব হলে বাজেটটা একটু বাড়িয়ে তালিকার উপরের দিকের ফোনগুলোর কথা ভাবা ভালো হবে। সিদ্ধান্ত আপনার দেখুন শেষমেশ কি হয়।

১০. Realme Narzo 50A

যাদের বাজেট ১৩-১৪ হাজার টাকার মধ্যে এবং প্রধান লক্ষ্য হলো এই দামে টুকটাক গেমিং করা এবং লম্বা সময় ধরে ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া

তাদের জন্য Realme Narzo 50A ভালোই মোবাইল হবে।মানে এটি অনেকটাই Infinix Hot 12 Play-এর চেয়ে একটু ভালো।

✅ ভালো দিকগুলো (Pros)

এই ফোনের মূল আকর্ষণ হলো এর MediaTek Helio G85 গেমিং চিপসেট। সত্যি বলছি, এই দামে এটি বেশ শক্তিশালী একটি প্রসেসর। Free Fire বা Call of Duty-এর মতো গেমগুলো আপনি মিডিয়াম সেটিংসে মোটামুটি ভালোভাবে খেলতে পারবেন।

সাধারণ কাজের জন্য তো কোনো চিন্তাই নেই। দেওয়া হয়েছে বিশাল ৬,০০০mAh ব্যাটারি। মানে, গেমিং করার পরও আপনি অনায়াসেই পুরো একদিন পার করে দিতে পারবেন।

দাম অনুযায়ী এর ৫০ মেগাপিক্সেল মূল ক্যামেরা দিনের আলোতে বেশ ভালই বলবো এবং ডিটেইলসহ ছবি তুলতে পারে।

যা এই বাজেটের অনেক ফোনের চেয়ে কিছুটা হলেও ভালো। ফেসবুকে আপলোড করার জন্য ছবির মান এটাই অনেক।

একটি মজার ফিচার হলো, আপনি এই ফোনটিকে পাওয়ার ব্যাংক হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন! বাপরে!! মানে, আপনার অন্য ফোন চার্জ দেওয়ার দরকার হলে, এই ফোন থেকেই চার্জ দিতে পারবেন। বাহ্ ব্যাপারটা সুন্দর নাহ্???

❌ দুর্বল দিকগুলো (Cons):

এর ৬.৫ ইঞ্চির ডিসপ্লেটি মাত্র HD+ রেজোলিউশনের, FHD+ নয়। মানে, iQOO বা Redmi 12-এর মতো অতটা শার্প বা ঝকঝকে ছবি বা ভিডিও এখানে দেখতে পাবেন না। আর রিফ্রেশ রেটও মাত্র ৬০ হার্জ (60Hz), যা স্ক্রলিংয়ের সময় অতটা স্মুথ লাগবে না।

চার্জারটি মাত্র ১৮ ওয়াটের। মানে, এই ৬,০০০mAh ব্যাটারিকে ০ থেকে ১০০% চার্জ করতে প্রায় ৩ ঘণ্টার কাছাকাছি সময় লেগে যাবে।

ফোনটির পেছনের ডিজাইনটা বেশ অদ্ভূত এবং প্লাস্টিক বডি হওয়ায় হাতে নিলে খুব একটা প্রিমিয়াম অনুভূতি পাইনি।

যদিও এই দামে 5G আশা করাটা ঠিক নয়, তবুও বলে রাখা ভালো যে এটি একটি 4G ফোন।

একদম শেষ কথা বলি। আপনার বাজেট যদি ১৪ হাজার টাকার আশেপাশে হয় এবং যদি গেমিং এবং লম্বা ব্যাটারি ব্যাকআপ চান , তাহলে Realme Narzo 50A আপনার জন্য একটি ভালো ডিল হতে পারে।

কিন্তু, আপনি যদি আর মাত্র হাজার খানেক টাকা বাড়াতে পারেন, তাহলে Samsung M14 বা iQOO Z9x 5G আপনাকে ডিসপ্লে, পারফরম্যান্স এবং সার্বিক অভিজ্ঞতার দিক থেকে অনেক অনেক ভালো অভিজ্ঞতা দেবে।

আমার ব্যক্তিগত পরামর্শ হবে, সম্ভব হলে বাজেটটা আরেকটু বাড়িয়ে ওই ফোনগুলোর কথা ভাববেন, বার বার ফোন কেনার চেয়ে বরং একবার-ই কিনুন দেখে,শুনে, জেনে, বুঝে কিনুন।

আমার শেষ কথা…

তাহলে এই ছিল ২০,০০০ টাকার মধ্যে আমার বেছে নেওয়া সেরা কয়েকটি মোবাইল ফোন। আমি চেষ্টা করেছি প্রতিটি ফোনের ভালো-মন্দ দিকগুলো কোনো রকম রাখঢাক না করে, একদম খোলাখুলিভাবে আপনাদের সামনে তুলে ধরতে।

মনে রাখবেন, কোনো ফোনই কিন্তু পারফেক্ট নয়। কোনোটার ক্যামেরা ভালো তো পারফরম্যান্স একটু দুর্বল, আবার কোনোটা গেমিংয়ের রাজা কিন্তু দেখতে সাদামাটা। আসল ব্যাপার হলো, আপনার প্রয়োজনটা কী?

আপনি যদি আমার মতো হন, যিনি একটি ক্লিন সফটওয়্যার আর ভালো ব্যাটারি চান, তাহলে হয়তো Moto ফোনটিই আপনার মন জয় করে নেবে।

আবার, আমার গেমার বন্ধু হয়তো iQOO ছাড়া আর কিছুই বুঝবে না!

তাই, আমার এই তালিকাটিকে একটি গাইড হিসেবে ব্যবহার করুন, কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি নিন আপনার নিজের প্রয়োজন, পছন্দ এবং বাজেটের কথা মাথায় রেখে।

আর হ্যাঁ, কেনার আগে অবশ্যই দোকানে গিয়ে ফোনটি হাতে নিয়ে দেখবেন, কারণ ফোনের “ফিল”টাও কিন্তু অনেক বড় একটা ব্যাপার, তাই না?

আশা করি আমার এই ছোট্ট প্রচেষ্টা আপনাদের উপকারে আসবে। ধন্যবাদ!